বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দাম কমেছে তরমুজের, শঙ্কায় চাষিরা

  •    
  • ১০ মে, ২০২২ ১০:৩৪

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমির তরমুজ সাধারণত এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তবে সম্প্রতি দাম অনেকটা কমে গেছে। ফলে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের খেজুরিয়া গ্রামের কৃষক উৎপল রপ্তান এবার চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। পেয়েছেন কাঙ্খিত ফলনও। তবে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করে খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

তরমুজ চাষিরা বলছেন, রমজান মাস শেষ হওয়ায় বাজারে তরমুজের চাহিদা কমে গেছে। এ ছাড়া ঈদের পরে রাজধানী ছেড়েছে লাখ লাখ মানুষ। এ কারণে ঢাকার আড়ৎদাররা এখন তরমুজ নিতে চাচ্ছেন না।

তাদের দাবি, এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আসানির ভয় দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে তরমুজ কিনতে সিন্ডিকেট বেধেছেন স্থানীয় ফড়িয়া ও আড়ৎদাররা। এ কারণে উৎপাদিত ফলের দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে বসেছেন কৃষকরা।

কৃষক উৎপল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার আমার জমিতে বেশি তরমুজের ফলন হয়েছে। তবে একই পরিমাণ জমিতে তরমুজ চাষ করে গত বছর যে দাম পেয়েছিলাম, এই বছর তার চার ভাগের এক ভাগ দামও পাচ্ছি না। এবার আমি চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম যার মধ্যে নিজের জমি দুই বিঘা, বাকি দুই বিঘা ১৩ হাজার টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছিলাম।

‘এই চার বিঘা জমিতে চাষ, বীজ, সার ও কিটনাশক প্রয়োগ করতে আমার আরও প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও ৯০দিন আমার পরিবারে ৩ জন ব্যক্তি দিনরাত একাকার করে জমিতে পরিচর্যা করেছেন।’

তিনি জানান, সবমিলিয়ে তরমুজ চাষ করতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে তার। ঈদের আগে ওই জমির উৎপাদিত তরমুজের দাম ফড়িয়ারা ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা বলেছিলেন।

কৃষক উৎপল আরও বলেন, ‘তবে আমার জমিতে অনেক বেশি তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। ৫ থেকে ১০ কেজি ওজনের প্রায় পাঁচ হাজার পিস তরমুজ আমার ক্ষেতে হয়েছে। যার দাম একেবারে সর্বনিম্ন হলেও ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা হওয়া উচিত। ভেবেছিলাম ইদের কিছুদিন পরে তরমুজ বিক্রি করব। তবে ঈদের আগে বর্ষা হওয়ায় তরমুজগুলি বেশ বড় হয়েছে। এখনি বিক্রি করার উপযুক্ত সময়।’

‘এমনি সময়ে ঝড়ের দোহাই দিয়ে ফড়িয়ারা আমার জমির তরমুজের দাম এখন এক লাখ টাকাও দিতে চাচ্ছেন না।’

তিনি জানান, দুই বিঘা জমির তরমুজ যা খরচ হয়েছে, তার অর্ধেক টাকাও তুলতে পারিনি। বাকি দুই বিঘা জমির তরমুজ এখনও ক্ষেতে থাকায় শঙ্কায় আছেন তিনি।

দাকোপের কৌলাসগঞ্জ ইউনিয়নের ধৌপাদি গ্রামের কৃষক কানাই মন্ডল বলেন, ‘আমি দুইটি ক্ষেতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। একটি ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি করতে পেরেছি, তাতে শুধু খরচটা উঠেছে। বাকিটা এখনও বিক্রি করতে পারিনি। ’

কৃষক ললিত মন্ডল বলেন, ‘দুই বিঘা জমির তরমুজ কেটে যশোর নিয়ে আড়তে বিক্রি করেছি। সেখানে দাম পেয়েছি ৬০ হাজার টাকা, তবে পরিবহন খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া আমার চাষাবাদে খরচ হয়েছিল আরও ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে আমার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।’

কৃষক সৈতাব গাইন বলেন, ‘রৌদে পুড়ে তরমুজ চাষ করেছি। খুব ভালো ফলনও পেয়েছি। কিন্তু এই তরমুজের যা দাম ফড়িয়ারা বলছেন তাতে খরচের টাকাও উঠছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লোনে টাকা নিয়ে তরমুজ চাষ করেছিলাম। এখন সেই টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো বুঝতে পারছি না।’

কৃষকদের অভিযোগে প্রেক্ষিতে কয়েকজন ফড়িয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। শরিফুল ইসলাম নামের এক ফড়িয়া বলেন, ‘আগে কৃষকরা দাম পেয়েও তরমুজ বিক্রি করতে চাননি। এখন সবাই একসঙ্গে তরমুজ বিক্রি করতে চায়। ফলে দাম কিছুটা কমেছে।’

সরাফাত নামের আরেক ফড়িয়া বলেন, ‘ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে আড়ৎ পর্যন্ত নিতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। তাই বেশি দামে ক্ষেত কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’

খুলনার বড়বাজারের আড়ৎদার জুলফিকার বলেন, ‘ঝড়ের আতঙ্কে এখন কৃষকরা সবাই একসঙ্গে তরমুজ বিক্রি করতে চাইছে। যে কারনে প্রতিদিন প্রচুর তরমুজ আসছে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে এখন পাইকারি ক্রেতারাও কম আসছে, এতে দাম অনেকটা কমে গেছে।’

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দাকোপে ৭ হাজার ৬২৫ হেক্টরে। এ ছাড়া বটিয়াঘাটায় ৩ হাজার ৬০০, পাইকগাছায় ১ হাজার ৫১০, কয়রায় ৮৯৫, ডুমুরিয়ায় ৩৫০, রূপসায় ৫, তেরখাদায় ৩ ও ফুলতলা উপজেলায় ১ ও শহরে আরও ১ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে।

কৃষকদের দাবি এখনও খুলনা জেলার প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি হয়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমির তরমুজ সাধারণত এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তবে সম্প্রতি সময়ে দাম অনেকটা কমে গেছে। ফলে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। ঝড়টি বাংলাদেশের ওপর আঘাত হানবে এখনও এমন কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। এখন শুধু ওই ঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর