গোপনে বিয়ের দেড় মাসের মধ্যে অঙ্কন বিশ্বাস নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
অঙ্কনের বন্ধুদের অভিযোগ, গত ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদের বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে যান অঙ্কন। ওইদিনই রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যান শাকিল।
দুই সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়।
অঙ্কন ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এম. এ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন।
অঙ্কনের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মমিন উদ্দীন।
অঙ্কন ভালো বিতার্কিক ছিলেন। বিতর্কের সুবাদেই বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের ২০১১-১২ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অঙ্কনের এক সহপাঠী জানান, বেশ কয়েক মাস ধরেই শাকিলের সঙ্গে তার সম্পর্কে বিপত্তি দেখা দেয়।
অঙ্কন ও শাকিলের বিয়ের কাবিননামার একটি কপি এসেছে নিউজবাংলার হাতে। তারা গত ২২ মার্চ বিয়ে করেছেন বলে জানা কাবিননামা থেকে জানা গেছে।
জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে শাকিলের বাসায় যান অঙ্কন। সেখানে এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে শাকিল ও তার ছোট ভাই হিমেল অঙ্কনকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান। শাকিল কখনও ভাই কখনও বন্ধুর পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখানে ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে হাসপাতাল থেকে অঙ্কনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আব্দুল মুকিত চৌধুরী সানীকে ফোনে খবর দেয়া হয়।
অঙ্কনের বন্ধু সানী বলেন, ‘২৪ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে অঙ্কন অসুস্থ বলে একটা ফোন আসে। পরে সেখানে গিয়ে অঙ্কনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পাই। ডাক্তাররা তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় হাসপাতালে শাকিল ও তার ভাই হিমেলকে দেখতে পাই। শাকিল ভাই ও বন্ধুর পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে প্রথমে ভর্তি করায়নি কর্তৃপক্ষ। পরে স্বামী পরিচয়ে ভর্তি করান।’
তিনি বলেন, ‘শাকিল প্রথমে ঘটনা বলতে চাইছিলেন না। পরে বলেন, বাসা থেকে হয়ত কিছু খেয়ে তার বাসায় এসেছে অঙ্কন। সেখানে কথা বলার এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে যান।’
পরে সানী সেখান থেকে অঙ্কনের পরিবারকে জানান।
অঙ্কন বিষক্রিয়ায় হার্ট অ্যাটাক ও পরে স্ট্রোক করেন বলে আজগর আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। পরে গত ১ মে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
আজগর আলী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, স্বামী পরিচয়ে অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তি করান শাকিল। পরে অঙ্কনের বাবা তপন বিশ্বাস তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে স্থানান্তর করেন।
অঙ্কনের মৃত্যুর পরে তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে শাকিল অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তির পর লাপাত্তা রয়েছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মন্তব্য করবেন বলে জানান।
রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ দেয়া হয় তাহলে আমরা আইনত ব্যবস্থা নেব। তবে এ ঘটনায় একটা পুলিশ ফাইল হয়েছে।’