বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেটে বাসা-মার্কেটে পুরোনো বৈদ্যুতিক তার: ৪ মাসে ১০ অগ্নিকাণ্ড

  •    
  • ১০ মে, ২০২২ ০০:১৭

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ‘সিলেট নগরীতে বেশির ভাগ মার্কেট ও বাসার বৈদ্যুতিক তার পুরোনো। সেগুলো স্পার্ক করে। এ ছাড়া ঝড়ে তারে তারে ঘষা লেগে বা ছিঁড়ে গিয়েও আগুন লেগে যায়।’

সিলেটে চলতি বছরের চার মাসে নগরীতে অন্তত ১০টি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে একজন মারাও গেছেন। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও বিপুল।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, এই মৌসুমে বাতাস বেশি থাকে। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বাসা ও মার্কেটে পুরোনো বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে। এ ছাড়া অসতর্কতার কারণেও বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

ঈদের আগের দিন ২ মে ভোরে লালদীঘির পাড় হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঈদের বেচাকেনা করে মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছিলেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ভোরে সেহরির সময় শুনতে পান তাদের মার্কেটে আগুন লেগেছে ।

এই মার্কেটে এক হাজারের বেশি কাপড়ের এবং অর্ধশত ভোগ্যপণ্যের দোকান রয়েছে। খুচরার পাশাপাশি পাইকারিও বিক্রি করা হয় এ মার্কেটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মধ্যে পুড়ে যায় অন্তত ২৫টি দোকান। ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ক্ষতি হয় প্রায় ১০ কোটি টাকার। এ আগুনে পথে বসতে হয়েছে অনেক ব্যবসায়ীকে।

আগুনের খবর পেয়ে এদিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।

তিনি রোববার নিউজবাংলাকে জানান, এখন যেখানে লালদীঘির পাড় হকার্স মার্কেট সেখানে আগে লালদীঘি নামে একটি বিশাল দিঘি ছিল। সেই দিঘি ভরাট করে মার্কেট করেছে সিটি করপোরেশন। এভাবে নগরের বেশির ভাগ পুকুর-দিঘি ভরাট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুকুর-দিঘি ভরাটের ফলও আমরা হাতেনাতে পাচ্ছি। কোথাও আগুন লাগলে নেভানোর পর্যাপ্ত জলাধার পাওয়া যাচ্ছে না। হকার্স মার্কেটের আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পানি সংকটে পড়তে হয়েছিল।’

চলতি বছরের প্রথম দিনই নগরীর কাকলী শপিং সেন্টারে আগুন লাগে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ১১তলা শপিং সেন্টারের চতুর্থ তলা থেকে মধ্যরাতে আগুনের সূত্রপাত হয়। বৈদ্যুতিক কেব্‌লের মাধ্যমে আগুন ওপরের তলাগুলোয় ছড়িয়ে যেতে লাগে। এতে কারও প্রাণহানি না হলেও, কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয় হয় বলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার মোড়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ব্লু-মুন নামের একটি বন্ধ কাপড়ের দোকানে আগুন লাগে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিক সোয়েব হাসান।

একই মাসের ২৮ তারিখ দক্ষিণ সুরমায় বাবনা পয়েন্টে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে পুড়ে যায় দোকানের সব গ্যাস সিলিন্ডার। ওই দোকানের ২০০ গজের মধ্যে ছিল যমুনা ও পদ্মার ডিপো। অল্পের জন্য সেগুলো রক্ষা পায়।

নগরীতে মার্চে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ৫ মার্চ আখালিয়ার গুয়াবাড়ি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে এক বৃদ্ধা নিহত হন। এ ঘটনায় কলোনির আটটি ঘর পুড়ে যায়। বিকেলে গ্যাসের চুলা থেকে কলোনির একটি ঘরে আগুন লাগে। এ সময় ঘরে আটকা পড়ে ৮০ বছর বয়সী শোভা রানী চন্দ্র মারা যান। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

৬ মার্চ নগরীর জেল রোড এলাকার বহুতল বিপণিবিতান আনন্দ টাওয়ারের পেছনে ফার্নিচারের গোডাউনে আগুন লাগে। রাত ৯টায় লাগা এ আগুন দুই ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। এতে ফার্নিচারের দুটি গোডাউন ও ছয়টি ঘর পুড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী।

এপ্রিলের ৫, ৬, ৭ ও ৯ তারিখে নগরীতে চারটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ৫ এপ্রিল পূর্ব দরগাহ গেটে বেবি গার্ডেন নামের শিশুপণ্যের একটি দোকান পুড়ে যায়। ভোর ৫টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিক বাবর আহমদ।

নগরীর চৌহাট্টায় দৌলতপুর স্কয়ার নামের একটি ৫তলা ভবনে ৬ এপ্রিল বেলা ২টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি, তবে ভবনটির একাধিক ফ্লোর পুড়ে যায়।

৭ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার আর্কেডিয়া শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে আগুন লাগে। একটি গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনে কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এরপর ৯ এপ্রিল আগুনে পুড়ে যায় মালনীছড়া চা বাগানের একটি বসতঘর ও একটি দোকান। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সিলেট নগরীতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী চম্পক দে বলেন, ‘দুদিন পরপর একেকটা মার্কেটে আগুন লাগছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

অসতর্কতার কারণে বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম ভূঞা।

তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ও গ্যাসের চুলা থেকে। এগুলো ব্যবহারে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। পুরোনো বিদ্যুতের লাইন, সুইচ ও গ্যাসের পাইপ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।’

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার বেশির ভাগ মার্কেট ও বাসার বৈদ্যুতিক তার পুরোনো। সেগুলো স্পার্ক করে। এ ছাড়া ঝড়ে তারে তারে ঘষা লেগে বা ছিঁড়ে গিয়েও আগুন লেগে যায়।’

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, এই সময় সিলেটে প্রচুর ঝড় হয়। ঝোড়ো বাতাসে আগুনের ঝুঁকিও বেশি থাকে। কোথাও আগুন লাগলে বাতাসের কারণে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে।

এ বিভাগের আরো খবর