ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে চতুর্থ দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
সাবেক এ হেফাজত নেতাকে সোমবার বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে তোলা হলে সাক্ষ্য দেন দুজন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) রকিব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চতুর্থ দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুলকে আদালতে আনা হয়। সাক্ষ্য শেষে দুপুরে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
পিপি রকিব উদ্দিন বলেন, ‘মামুনুলের বিরুদ্ধে সোনারগাঁওয়ের স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম সাগর ও নাজমুল হাসান শান্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঘটনার দিন তারা যা দেখেছেন, আদালতকে তা জানিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাক্ষীরা আদালতকে জানিয়েছেন, তারা ফেসবুকে লাইভ দেখে রয়েল রিসোর্টে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন মামুনুল হকের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। পাশে ছিলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। তখন মামুনুল হক পুলিশের কাছে মামলার বাদীকে (ঝর্ণা) স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে ঝর্ণা জানান, তিনি তার (মামুনুল) স্ত্রী নন। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন মামুনুল।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘মামলার ৪৩ জন সাক্ষীর মধ্যে এ নিয়ে ৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে আজ আদালতে মামলার আরেক সাক্ষী সোহাগ রনি হাজির হওয়ার কথা থাকলেও তিনি হাজির হননি। পরবর্তী সাক্ষ্য শুনানির দিন আদালত নির্ধারণ করবে।’
এদিকে মামুনুলের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই সাক্ষীর মধ্যে শফিকুল ইসলাম সাগর মুগড়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও নাজমুল হাসান শান্ত ছাত্রলীগ নেতা। অথচ তারা আদালতে বলেছেন দুজনই ব্যবসায়ী।
‘তারা আদালতে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাজানো সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামুনুলকে ফাঁসানোর জন্য অসামঞ্জস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
২০২১ সালের গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামের এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে আটক হন মামুনুল হক। শুরুতে তিনি ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করলেও পরে জানা যায়, ওই নারীর সঙ্গে তার বিয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামুনুলের নামে ধর্ষণ মামলা করেন ঝর্ণা। এতে তিনি অভিযোগ করেন, মামুনুল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। বিয়ে করবেন বলে আর করেননি।
এই মামলার আগে ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল। এরপর সহিংসতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। ঝর্ণার মামলার পর তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
গত ৩ নভেম্বর ধর্ষণ মামলায় মামুনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।