বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আসানির আঘাতের শঙ্কায় কাঁচা লিচু ঘরে

  •    
  • ৯ মে, ২০২২ ১৩:৫৪

মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছি। ঝড়টি এমন সময়ে আসছে যখন পাকা ধান মাঠে রয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রি নিয়ে বাগানের মালিকরা বিপাকে পড়েছেন।’

ঘূর্ণিঝড় আসানি ধেয়ে আসছে এমন খবরে মাগুরা জেলার কৃষকরা আগাম ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছে। মাঠের সবুজ ধান সোনালি হতে আরও কিছুদিন বাকি থাকলেও গত বছরের আম্পানের কারণে হওয়া ক্ষতি আজও পুষিয়ে নিতে পারেননি কৃষকরা।

তাই গেল ঈদের পর থেকেই জেলার কৃষকদের সতর্ক করেছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে শতাধিক বাগানের লিচু পেড়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা।

তীব্র গরমে আগাম পাকা লিচু ঝড়ের কারণে আগে পেড়ে ফেলায় প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রি নিয়ে বাগান মালিকরা শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাগুরা সদরে লিচু বাগানের সংখ্যা ৩০০-এর বেশি। এর মধ্যে হাজরাপুর ও হাজিপুর ইউনিয়নেই ২৫০টি লিচুবাগান রয়েছে। বাকিগুলো নড়িহাটি, শিবরামপুর এলাকায় অবস্থিত। এসব এলাকার প্রতিটি বাড়ির পাশেই ছোট-বড় লিচুর বাগান রয়েছে যুগ যুগ ধরে।

ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে যেসব আগাম জাতের লিচু পাওয়া যায় তার অধিকাংশই আসে মাগুরা সদরের কয়েকটি গ্রাম থেকে। এর মধ্যে হাজরাপুরের লিচু সবচেয়ে বিখ্যাত।

হাজরাপুরের লিচুবাগানের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তীব্র গরমে অপরিপক্ব লিচুতে আগেভাগেই রং এসেছে। দেখতে পাকা মনে হলেও আসলে এগুলোর ভেতরে কাঁচা। মিষ্টি লিচু পেতে আরও সপ্তাহখানেক পর গাছ থেকে নামাতে হতো। কিন্তু আসানি আসার খবরে নড়েচড়ে বসেছেন বাগানের মালিকরা।

রোববার সরেজমিনে মাগুরা সদরের লিচুর গ্রাম নড়িহাটি, শিবরামপুর, ইছাখাদা, বারোমাইল, সাঁইত্রিশ, আলাইপুর, হাজিপুর ও হাজরাপুরে দেখা যায়, পাকার পাশাপাশি আধাপাকা লিচুও গাছ থেকে পেড়ে ফেলছেন শ্রমিকরা।

গাছের নিচেই বাছাই করে সেগুলো আঁটি করছেন ১০০ ও ৫০টি করে। পরে কাগজের বাক্সে বন্দি করে সেগুলো ভ্যানে করে প্রধান সড়কে নিয়ে যাচ্ছে আরেক দল। এরপর ঢাকাগামী ট্রাকে ভরা হচ্ছে লিচু।

বারোমাইল এলাকার লিচুবাগানের শ্রমিক রবিউল ইসলাম জানান, লিচুর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। এবার দেশি লিচুর ফলনও ভালো। তবে এগুলো মিষ্টি হতে আরও চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগত।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় আসানির পূর্বাভাসে লিচু সব পেড়ে ফেলতে হবে ভেবে আমাদের মাথা খারাপ অবস্থা। না হলে গত বছরের আম্ফানের মতো ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।’

কৃষি উদ্যোক্তা দিদার হোসেনের লিচুবাগান সদরের নড়িহাটি এলাকায়। ৭০ বছরের সব থেকে পুরান লিচুবাগান রয়েছে তার। গতবার আম্ফানের কারণে লাখ টাকার লিচু ঝরে পড়েছিল তার বাগানের। কেজি হিসাবেও সেগুলো কেউ কিনতে চায়নি।

তিনি বলেন, ‘এবার নিজেদের বাগানগুলোতে লোক লাগিয়েছি। আজকালের মধ্যে সব লিচু পেড়ে ফেলতে হবে।’

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় লিচুর আবাদ হয়েছে ৫৫০ হেক্টরের বেশি জমিতে। চাষিরা এবার স্থানীয় জাত হাজরাপুরী, মোজাফফরী, বোম্বাই ও চায়না-৩সহ বিভিন্ন জাতের লিচুর চাষ করেছে।

জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে সদরে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় লিচুর। প্রচণ্ড খরা ও তীব্র দাবদাহে এবার সদরের বাগানের বেশির ভাগ লিচু পাকতে শুরু করেছে পরিপক্ব না হয়েও। এর ওপর আসানি ঝড়ের পূর্বাভাস চাষিদের আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আবহাওয়া পযবেক্ষণ করছি। এ মুহূর্তে চাষিদের কী করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি। ঝড়টি এমন সময়ে আসছে যখন পাকা ধান মাঠে রয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রি নিয়ে বাগানের মালিকরা বিপাকে পড়েছেন।

‘কারণ এই সময়টিতেই লিচু পাকতে শুরু করে। টক থেকে মিষ্টি হয়। আর পাঁচ দিন সময় পেলে লিচুতে ভালো দাম পাওয়া যেত। কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাসের কারণে বাগান মালিকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন লিচু পেড়ে তারা বিক্রি করে দেয়। কারণ ঝড় এখন পর্যন্ত শক্তিশালী পর্যায়েই রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর