৩২ বছর বয়সী দিনমজুর রুহুল আমিন শেখের গ্রামের বাড়ী বাগেরহাটে। বাড়তি আয়ের আশায় ৭ মাস আগে স্ত্রী আসমা বেগম ও ৫ বছর বয়সের এক ছেলেকে নিয়ে আসেন খুলনার রূপসায়। সালাম নামের এক শ্রমিক সর্দারের মাধ্যমে তারা কাজ নেন উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের আজাদ ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায়।
তবে সর্দারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাকে আটকে রেখে কাজে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, ওই ভাটা থেকে বাইরে বের হওয়ায় রুহুল আমিনের পাশাপাশি তার স্ত্রীকেও নির্যাতনের অভিযোগ ওই সর্দারের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে রহুল ও তার স্ত্রী আসমা রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
রোববার বিকেলে আহত রুহুল আমিনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘৭ মাস হয়েছে আমরা ভাটায় আছি। আমার স্ত্রীর বাবা অসুস্থ। তার কাছে কেউ থাকে না। বাড়িঘরও দেখার কেউ নেই। সে কারণে শুক্রবার (০৬ মে) বিকেলে ভাটার কাজ শেষ করে স্ত্রী ও ছেলেকে বাড়ি পাঠাতে তাদের মাঝির খেয়া ঘাটে এগিয়ে দিতে রওনা হই।
‘তখন ইটভাটার মোহরি আমাদের আটক করে। তিনি সালাম সর্দারকে জানান, আমরা পালিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন সালাম সর্দার আমার কোনো কথা না শুনেই মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের নির্যাতনের ফলে আমি অচেতন হয়ে যাই।’
হাসপাতালে ভর্তি রুহুলের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসারে একটু সুখের জন্য আমরা সেখানে কাজ করতে গিয়েছিলাম। কাজে আসার আগে সালাম সর্দার আমার স্বামীকে বলেছিলেন, ৬ মাস কাজ করলে আমাদের একটি মোটর ভ্যান দিবেন। এখন ৭ মাস অতিবাহিত হলেও তারা আমার স্বামীকে ছাড়তে চান না। তাই শুক্রবার বিকেলে আমার স্বামী আমাকে ও ছেলেকে বাড়ি পাঠানোর জন্য কিছুদূর এগিয়ে দিতে যাচ্ছিল। তখন ভাটার মোহরি আমাদের ধরে সর্দারের হাতে তুলে দেয়।
‘ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার স্বামী ও আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। সালাম সর্দার আমার স্বামীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। আমি ঠেকাতে গেলে আমাকেও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঠোঁটে ও বাম ঘাড়ে মারধর করে।’
আসমা জানান, মারধরের পর ভাটার কয়েকজন শ্রমিক তাদের উদ্ধার করে পাশের এক গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাদের ভাটায় নিয়ে এসে একটি ঘরে ফেলে রাখা হয়।
আসমা বলেন, ‘আমার স্বামী প্রায় ৩ ঘণ্টা অচেতন ছিলেন। আর আমরা যাতে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে পারি, সে কারণে তারা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিল।’
পরদিন শনিবার (৭ মে) বিকেলে আসমা ভাটা থেকে পালিয়ে শ্রীফলতলা পুলিশ ক্যাম্পে বিষয়টি জানান। পুলিশ গিয়ে তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে।
রূপসা থানার শ্রীফলতলা ক্যাম্প ইনচার্জ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ওই শ্রমিকের স্ত্রী আমাকে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিক তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমি নিজের টাকা দিয়ে তাদের খাবার ও ওষুধ কিনে দিয়েছি। তারা সুস্থ হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে আজাদ ব্রিকস কর্তৃপক্ষের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে ওই ভাটার আরেক শ্রমিক সর্দার রনি বলেন, ‘ঘটনার কথা আমি শুনেছি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। যতটুকু জেনেছি তারা রাতের আঁধারে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। পালানোর সময় ওই পরিবারকে সর্দারের লোকজন ধরে ফেলে। এরপর তাদের সঙ্গে কী হয়েছে, আমার জানা নেই। তবে ঘটনার পরে পুলিশ এলে সালাম সর্দার পালিয়েছে।’