মায়ের প্রতি ভালোবাসা নেই এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। মায়ের প্রতি ভালোবাসা চিরন্তন ও অকৃত্রিম। সেই ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম মানুষ ভেদে ভিন্নতা রয়েছে।
তেমনি মায়ের প্রতি বিরল ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের বেকাসাহরা গ্রামের কৃষক এনামুল হক। নিজের জমিতে এঁকেছেন ‘মা’।
এনামুল শ্রীপুর বাজারে পান-সুপারির ব্যবসা করেন। ব্যবসার পাশাপাশি বাকি সময় করেন কৃষিকাজ।
এনামুল জানান, স্থানীয় আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে এক বিঘা জমি বর্গা নেন তিনি। পরে ওই জমিতে ধানের চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আধা বিঘা জমিতে নিজ হাতে এঁকেছেন এই শিল্পকর্ম।
তিনি বলেন, ‘চার মাস আগে সিদ্ধান্ত নিই ফসলের মাঠে মা আঁকব। সেই লক্ষ্যে জানুয়ারির ৬ তারিখ বীজতলা লাগানো হয়েছে। বেগুনি ধান ও ব্ল্যাক রাইস এই দুই জাতের বীজের সমন্বয়ে মা আঁকা হয়েছে। এটির রূপরেখা করতে দু-তিন দিন সময় লেগেছে। এর প্রায় এক মাস পর থেকেই দৃশ্যমান হতে থাকে এটি। অল্প কিছুদিন পরই ধান কেটে গোলায় তোলা হবে।’
এনামুল বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে প্রথমে সহযোগিতা চেয়েছিলাম ফসলের মাঠে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকার জন্য। কিন্তু তখন করোনা মহামারির কারণে লকডাউন ছিল। এ জন্য তারা লোকবল দিতে না পারায় আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে মা এঁকেছি।’
ফসলের জমিতে এমন শিল্পকর্ম দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকে তা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত মানুষ। প্রশংসাও করছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘অনেকেরই জমি আছে কিন্তু এমন সুন্দর চিন্তাধারার মানুষ কজন আছেন। প্রথমে আমরা ভাবতে পারিনি মা লেখাটি এমন সুন্দর হবে। সত্যি এটি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।’
গাজীপুরের টঙ্গী থেকে এনামুলের নান্দনিক কারুকাজ দেখতে এসেছেন ওমর আহমেদ।
তিনি বলেন, “ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি, এখানকার একজন কৃষক মায়ের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ ফসলের মাঠে ‘মা’ এঁকেছেন। তাই ঈদের ছুটিতে দেখতে এসেছি। মায়ের প্রতি তার এই ভালোবাসা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
ফসলের মাঠে মা লেখার বিষয়ে এনামুল বলেন, ‘মনের মধ্যে তাড়না জাগছে তাই মায়ের প্রতি ভালোবাসাটা দেখালাম ফসলের মাঠে মা এঁকে। অনেকেই মায়ের নামে দোকান করেন, গাড়িতে মায়ের নাম লেখেন, বিভিন্নভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেন। কৃষিজমিতে এর আগে কেউ মা আঁকেননি।
‘তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম জমিতে মা লিখব। সেই ভাবনা থেকেই এটি করা।’
তিনি বলেন, ‘মা অসুস্থ, তাকে দেখাতে পারলে আরও ভালো লাগত। তবে আত্মীয়স্বজন দেখে গিয়ে মাকে বলেছেন। মা এবং আত্মীয়স্বজন সবাই খুশি।’