বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আসানি দেশে আঘাত করার আশঙ্কা কম দেখছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। আগামী ১২ মে এটি ভারতীয় উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানান তিনি।
সচিবালয়ে রোববার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, ‘ভারতের আন্দামানে যে সাইক্লোনিক সিস্টেম তৈরি হয়েছিল সেটি ধীরে ধীরে লঘুচাপ, নিম্নচাপ এবং গভীর নিম্নচাপ পেরিয়ে সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর অবস্থান হলো অক্ষাংশ ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং দ্রাঘিমাংশ ৪৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি। এ অবস্থানে এটা এখন আছে। আমাদের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে এটি ১ হাজার ১৭৫ কিলোমিটার দূরে আছে। এটি ৫৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তর-পশ্চিম দিকে ধাবিত হচ্ছে।
‘এটি যেদিকে ধাবিত হচ্ছে, সেদিকেই যদি যায় তাহলে এটা ভারতের বিশাখাপত্তনম, উড়িষ্যার ভুবনেশ্বর এবং পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় আঘাত হানতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে আমরা যে বার্তা পেয়েছি, তারা ধারণা করছে এটি ১২ মে বিশাখাপত্তনম, ভুবনেশ্বর স্পর্শ করে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। বাংলাদেশে এটি আঘাত হানার আশঙ্কা এখনও পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ১২ মে সকালে এটি বিশাখাপত্তনম, ভুবনেশ্বর ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনে দুর্বল হয়ে যাবে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে, তবে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হবে না। এখন পর্যন্ত এটাই সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পেরেছি।
‘তবে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সব সময় পরিবর্তন হয়, এটা যেকোনো সময় যেকোনো দিকে টার্ন নিতে পারে। এখন এটা উত্তর-পশ্চিমে ধাবিত হচ্ছে। যদি এটা উত্তর দিকে ধাবিত হয়, তাহলে এটা আমাদের সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী এলাকায় আঘাত করতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপকূলীয় অঞ্চলে তৎপরতা শুরুর কথাও জানান তিনি।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ সবাইকে নিয়ে সভা করেছি। সবাইকে সচেতন করা হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন এবং সতর্কবার্তা তারা প্রচার করছেন।
‘এ ছাড়া সাইক্লোন সেন্টারগুলো প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দিয়ে রেখেছি। সেগুলোর প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। রান্না করা খাবারের জন্য চাল ও অর্থ দিয়েছি। মোটামুটি আমাদের প্রস্তুতি আছে। সেল্টারগুলোয় যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্ব রেখে আশ্রয় দেয়া হয়, সে ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।’
ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদের জন্য আতঙ্কের নামান্তর। কয়েক বছর পর পরই সামুদ্রিক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে এখানকার জনজীবন। ২০০৭ সালে উপকূলীয় জেলাগুলোয় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। এটি কেড়ে নেয় হাজার মানুষের প্রাণ।
ওই ধাক্কা সামলে না উঠতেই ২০০৯ সালে আঘাত হানে আইলা। প্রাণহানিসহ মানুষের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি, মৎস্যসহ অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করে উঠতে না উঠতেই ২০২০ সালে আবার আঘাত হানে আম্ফান।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘আসানি’ দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আসানি শব্দের অর্থ ক্ষুব্ধ। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করা হয়।