মানসিক হীনম্মন্যতা, মাদকাসক্তের অভিযোগ নাকচ করে এর বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছেন টিটিই শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘ডিসিও স্যার কেন, কীভাবে এমন মন্তব্য করেছেন আমার জানা নেই। ওপরে আল্লাহপাক একজন আছেন। তিনি দেখবেন।’
পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে রোববার দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
দায়িত্ব ফিরে পাওয়ায় খুশি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাকে যে সাময়িক বরখাস্ত করেছে, সেই সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমি যেহেতু রেলওয়ের জন্য কাজ করি, দেশের জন্য কাজ করি, যেহেতু আমাকে আবার কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়েছে। এতে আমি অবশ্যই খুশি।’
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার অপরাধে তিন যাত্রীকে জরিমানা করেছিলেন ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনার পর ওই টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, যা নিয়ে তৈরি হয় সমালোচনা। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন শফিক।
টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন পাকশীর রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে তিনি একটি লিখিত বিবৃতি দেন। এতে শফিকুলের বিরুদ্ধে মাদকসেবনসহ নানা অভিযোগ তোলা হয়।
পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শফিকুল। এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনে এটাই প্রথম সাময়িক বরখাস্ত। এর আগে আমি কখনও সাময়িক বরখাস্ত হইনি। আর আপনারা বলছেন আমি নেশাগ্রস্ত, আপনাদের কাছ থেকেই শুনছি, আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।
‘আমি পারতপক্ষে এক কাপ চাও খাই না। বিড়ি-সিগারেট বা মাদকাসক্তি এমন তো প্রশ্নই আসে না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ডিসিও স্যার নাকি এমন মন্তব্য করেছেন। কেন, কীভাবে এমন মন্তব্য করেছেন আমার জানা নেই। ওপরে আল্লাহপাক একজন আছেন। উনি বিচার করবেন।’
চাকরি নিয়ে আপনি মানসিক হীনম্মন্যতায় ভুগছেন কি না- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার যেটা চাকরি হয়েছে সেটায় যদি স্যাটিসফাইড না থাকতাম, তাহলে যেদিন গাড়িতে ডিউটি করেছি, সেদিন কিন্তু আমি আপ অ্যান্ড ডাউনে ৭৮ হাজার ৪৪০ টাকা রাজস্ব আদায় করেছি এবং জমা দিয়েছি। সেই রিসিটও দেখিয়েছি। ঢাকাতে এবং ঈশ্বরদীতে জমা দিয়েছি।
‘যদি আমি মানসিক বিকারগ্রস্ত বা এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তো আমি এত আন্তরিকতার সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য কাজ করতাম না। এখন আপনারা এটা বিবেচনা করবেন যে আমি মাদকাসক্ত কি না।’
যাত্রী লিখিত অভিযোগে বলেছেন, আপনি তাকে লাথি দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন- এমন অভিযোগের কারণ কী।
জবাবে শফিক বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, ওই যাত্রীর সঙ্গে এমন কোনো কথাই হয়নি। শুধু টিকিটের বিষয়ে একটু কথা হয়েছে এবং আমি সম্মানের সঙ্গে বলেছি, তারাও সম্মানের সঙ্গে যে ভাড়াটা চেয়েছি সেই ভাড়াটা দিয়ে দিয়েছে। আমি ভাড়ার রিসিটটা দিয়ে আমার কাজ শুরু করেছি।’
তারা মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিল কি না এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমিই তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা কি এসইও স্যারের রিকুয়েস্টে এসেছেন? তাহলে এসইও স্যার সাধারণ যে ভাড়া সেটা দিয়ে আপনাদের টিকিট করে দিতে বলেছেন। তারা ভাড়া দিয়ে দেয়, আমি টিকিট করে দিই।
‘যেহেতু এসইও নুর আলম স্যার আমাকে বলেছেন তাই আমি তো আর অতিরিক্তভাবে জিজ্ঞেস করতে পারি না যে আপনারা কি মন্ত্রীর লোক। এমন কোনো কথা আমি তখন তাদের জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু এসইও স্যার আমাকে নিশ্চিত করেছিলেন যে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয়।’
তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কী করবে আমি জানি না। আমি বিষয়টা নিয়ে শঙ্কিত না। আমি বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য, রাজস্ব আদায়ের জন্য একটা চাকরি করি। আমি দেশের জন্য কাজ করি, কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ। এটা নিয়ে আমি কোনো দ্বিধায় ভুগছি না।’