বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, সাড়ে ৩ লাখে মীমাংসা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৮ মে, ২০২২ ০১:১১

নড়াগাতি থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে মীমাংসার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নড়াইলের কালিয়ার নড়াগাতিতে শিউলি বেগম নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য রুমের ভেতর নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। পরে পুরো বিষয়টি ৩ লাখ টাকায় মীমাংসা হয়।

শুক্রবার কালিয়ার নড়াগাতি থানার বড়দিয়া বাজারে হাজি খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে।

মীমাংসার পর শুক্রবারই মরদেহ দাফন করা হয়। অবশ্য পরে ওই প্রসূতির পরিবার থেকে কেউ পুলিশে কোনো অভিযোগ করেনি।

মারা যাওয়া শিউলী বেগমের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানার বড়ফা গ্রামে।

অবশ্য ঘটনা জানার পর শনিবার দুপুরে নড়াইল জেলার সিভিল সার্জন নাছিমা আকতার কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাজল মল্লিককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে বড়দিয়া বাজারসংলগ্ন মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সমঝোতার আগে মৃত প্রসূতির স্বজন ও স্থানীয়রা হাসপাতাল অবরোধ করে রাখলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়।

শিউলী বেগমের পরিবারের সদস্যরা জানান, সিজারিয়ানের জন্য পূর্ব নির্ধারিত দিনে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিউলীকে। গোপালগঞ্জ থেকে আসা কথিত সার্জন শরিফুল ইসলাম সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যায়। অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসক প্রসূতিকে অচেতন করার জন্য একটি ইনজেকশন পুশ করার সঙ্গে সঙ্গে সে ছটফট চেঁচামেচি করতে থাকে। তখন শিউলী বেগমের কাছে কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। একটু পর শিউলীর মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর প্রেসার কমে গেছে জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগী খুলনা মেডিক্যালে পাঠানোর কথা বলে। তবে বাধা দেয় শিউলীর স্বামী জিন্নাত শেখ ও তার বাবা আকবর মোল্যাসহ স্বজনরা।

তারা জানান, এমন সময় হট্টগোল শুরু হয়। এমনকি ঘটনা হাতাহাতি পর্যায়ে গড়ালে হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। আর পেছনের দিক দিয়ে সেই চিকিৎসক শরিফ পালিয়ে যান।

পরে মৃত প্রসূতির পরিবারের লোকজন সুবিচারের দাবিতে লাশ নিয়ে হাসপাতালে অবস্থান নেয়।

মৃত শিউলীর স্বামী জিন্নাত শেখ বলেন, ‘অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলায় লড়তে গেলে আমাদেরও দৌড়াতে হবে, অর্থ খরচ করতে হবে। কিন্তু আমি সামান্য ইজি বাইক চালক। সেই চিন্তা করে গ্রাম্য সালিশে অনেক দর-কষাকষির মাধ্যমে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ এবং ৫০ হাজার টাকা মিলাদ বাবদ নিয়ে মীমাংসা করেছি।’

মৃত শিউলী বেগমের বাবা আকবর মোল্যা বলেন, ‘মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই। এরপর আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারি। আমরা গরিব মানুষ, মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। তাই আমার নাতনির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সাড়ে তিন লাখ টাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে।’

সালিশদার মশিউর রহমান জানান, মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠে স্থানীয় পর্যায়ে খাশিয়াল ইউপি সদস্য জিন্নাত, ঈমান শেখ ও জয়নগর ইউপি সদস্য রুবেল চৌধুরী, শিউলী বেগমের পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশ বৈঠক বসে। প্রকৃতপক্ষে নিহতের স্বামী এবং বাবা উভয়েই গরিব। শিউলীর চার বছরের শিশু জামিলার ভবিষ্যতের জন্য এই টাকা নিয়ে মীমাংসা হয়েছে।’

জানতে চাইলে হাজি খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার অনুপ দাস বলেন, ‘বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। এর বাইরে কোনো কিছু বলতে চাই না।’

এ ব্যাপারে মতামত জানতে হাজি খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক খান শাহীন সাজ্জাদ ওরফে পলাশের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে পরিচয় পাওয়ার পর লাইন কেটে দেন। পরে ফোন বন্ধ করে দেন।

নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে মীমাংসার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নড়াইল সিভিল সার্জন নাছিমা আক্তার বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে।’

হাজি খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের বেসরকারি হাসপাতালটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করলেও তা অনুমোদন দেয়া হয়নি বলে জানান।

এ বিভাগের আরো খবর