পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে টানা পাঁচ দিন প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করেও তার দেখা পাননি এক সন্তানের জননী সীমা আক্তার। এ জন্য বাবার বাড়িতে ফিরে এসে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সীমার বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাতে কীটনাশক পান করে অসুস্থ হলে সীমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শনিবার দুপুরে কিছুটা সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে যার জন্য বিষপান, সেই প্রেমিক রায়হান এখনও আত্মগোপন করেই আছেন। মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালীর এ ঘটনাটি শনিবার জানাজানি হলে এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
২৫ বছর বয়সী প্রেমিক রায়হান হোসেন মির্জাগঞ্জ উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ছৈলাবুনিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মৃধার ছেলে। উপজেলার সুবিদখালী বাজারে মতিউর রহমানের সার ও কীটনাশকের দোকান রয়েছে। এই দোকান রায়হানও দেখাশোনা করেন।
অন্যদিকে প্রেমিকা ২০ বছর বয়সী সীমা আক্তার উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মানসুরাবাদ গ্রামের জব্বার জোমাদ্দারের মেয়ে এবং কলাগাছিয়া গ্রামের মো. শহীদুল্লাহর সাবেক স্ত্রী।
সীমা জানান, সাড়ে চার বছর আগে শহীদুল্লাহর সঙ্গে পারিবারিকভাবেই তার বিয়ে হয়। সেই সংসারে তাদের তিন বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে। কিন্তু গত আট মাস আগে স্বামীর সঙ্গে তার কলহ হয়। একপর্যায়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক দিন বিষ কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়ে সুবিদখালী বাজারে রায়হানের কীটনাশকের দোকানে যান সীমা। তখন রায়হানই তাকে বুঝিয়ে বিষপান থেকে বিরত রাখেন।
সীমা জানান, সেই থেকেই রায়হানের সঙ্গে তার সম্পর্ক শুরু। প্রায় সাত মাস আগে তা প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়।
সীমা বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রায়হান আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও তৈরি করে। কয়েক দিন আগে কৌশলে রায়হান আমাকে দিয়ে আমার স্বামী শহীদুল্লাহকে তালাকও দেওয়ায়। কিন্তু এরপর বিয়ের জন্য চাপ দিলে রায়হান বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়!’
সীমা আরও বলেন, ‘রায়হানের মতিগতি ভালো না হওয়ায় আমি গত সোমবার (২ মে) বিয়ের দাবিতে তার বাড়িতে অবস্থান নিই। কিন্তু আমাকে দেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। গত পাঁচ দিন ধরে আমি ওই বাড়িতে থাকলেও সে একবারের জন্যও আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। তা ছাড়া রায়হানের বাবা-মাও আমার সঙ্গে তেমন একটা ভালো ব্যবহার করেনি।’
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার রাতে রায়হানের বাড়ি থেকে সীমাকে তার বাবা এসে নিয়ে যান। এরপর মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন সীমা। কোনো উপায় না পেয়ে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
সীমা বলেন, ‘সবাই শুধু আমার শরীরটাকে ভালোবাসে। আমাকে কেউ ভালোবাসে না। তাই এই পৃথিবীতে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার নাই।’
এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘মেয়েটি বাবার বাড়িতে বসে বিষপান করেছে বলে জানতে পেরেছি। হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। লোকমুখে শোনা গেছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে রায়হানের ব্যবহৃত ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।