দুই ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মামার বাড়ি যাচ্ছিলেন হেলেনা বেগম। পথে এক দুর্ঘটনায় নিজে অক্ষত থাকলেও হারিয়ে ফেলেছেন দুই সন্তানকেই। দুই বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে সন্তানদের।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় বনপাড়া-ঢাকা মহাসড়কে গাজী অটো রাইসমিলের সামনে শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এতে প্রাণ হারান সাতজন। তাদের মধ্যে ছয়জন ঘটনাস্থলেই আর একজন হাসপাতালে মারা যান। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
নিহতদের দুজন নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুরের পাইকোড়দৌল গ্রামের ১২ বছর বয়সী সাদিয়া পারভিন ও ১৮ বছর বয়সী কাওছার আলী। সাদিয়া পড়তেন পাইকোড়দৌল উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে আর কাওছার দিয়ারভিটা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
বড় হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে জানান, মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য সাদিয়া ও কাওছারকে নিয়ে শনিবার সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় বাস টার্মিনাল থেকে সিয়াম পরিবহনের বাসে ওঠেন হেলেনা। বড়াইগ্রামে বনপাড়া-ঢাকা মহাসড়কে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্র্যাভেলসের বাসের সঙ্গে তাদের বাসের সংঘর্ষ হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছেলে-মেয়েকে একসঙ্গে হারিয়ে তাদের বাবা-মা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। এলাকাতেও শোকাবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুই সন্তান নিয়ে শাজাহান-হেলেনা কৃষক দম্পতির প্রাণবন্ত সংসার ছিল। পরিবারটা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই।’
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘একসঙ্গে দুই ছেলে-মেয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। জেলা প্রশাসন থেকে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে। তা ছাড়া নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
‘এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’