দুষ্কৃতকারীদের ‘গণপিটুনি’ দিয়ে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়ে নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এইচ এম ইব্রাহিম বলেছেন, এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তিনি এক নম্বর আসামি হতে প্রস্তুত।
সোনাইমুড়ী উপজেলায় একটি বিদ্যালয় মাঠে এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
ওই অনুষ্ঠানে দেয়া তার বক্তব্যের ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে চলছে সমালোচনা।
এ বিষয়ে এমপি এইচ এম ইব্রাহিম শনিবার নিউজবাংলাকে বলেন, বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। একটু স্লিপ অফ টাং হয়ে অতিরঞ্জিত হয়ে গেছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বক্তব্যে এমপিকে বলতে শোনা যায়, ‘দুষ্কৃতকারীদের গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলবেন। আমি হুকুম দিয়ে দিচ্ছি এসব দুষ্কৃতকারীদের গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেললে কিছুই হবে না। যদি কেউ মামলা করে আমি মামলার এক নম্বর আসামি হব। আপনারা কি আমার কথা বুঝতে পারছেন।
‘যদি পুলিশ না পারে, আমি আপনাদেরকে বলে গেলাম, আপনারা এ সমস্ত দুষ্কৃতকারীদেরকে যারা সমাজের মানুষের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে, যারা সমাজের মানুষকে অত্যাচার করছে, আপনারা তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলবেন, তাতে কিছুই হবে না। সেই ঘটনায় যদি আসামি হতে হয় আমি আসামি হব সে ঘোষণা দিয়ে গেলাম।’
উপজেলার মহুরীগঞ্জ বিদ্যালয় মাঠে দেওটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন শাকিল, আওয়ামী লীগ নেতা কিং মোজাম্মেল, আবুল খায়ের, জামাল উদ্দিন, বেলাল পাটোয়ারীসহ আরও অনেকে।
এমপির ছড়িয়ে পড়া বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করছেন স্থানীয়রাও। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা শাখার সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংসদে আইন তৈরি করার এখতিয়ার যাদের আছে তাদের একজন হচ্ছেন সংসদ সদস্য। ফলে কোনো সংসদ সদস্য যদি কাউকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার কথা বলেন নিঃসন্দেহ এটি আইনের পরিপন্থি। মানুষ তার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করে না এবং এটা আইনের প্রতি অশ্রদ্ধার শামিল।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দুষ্কৃতকারীদের পিটিয়ে মারতে এমপি যে নির্দেশ দিয়েছেন তাতে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। মানুষ কারণে-অকারণে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উৎসাহী হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, চাটখিল ও সোনাইমুড়ী এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ভেতর দুটি শক্তিশালী বলয় আছে। একটির নেতৃত্বে আছেন এমপি এইচ এম ইব্রাহিম, অন্যটির নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। প্রকাশ্য সমাবেশে এমপির এমন বক্তব্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এ বক্তব্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে না। সমাজের মাদকসেবী, কারবারি, ছিনতাইকারী ও দুষ্কৃতকারী যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে কথাগুলো এসেছে। হয়তোবা কথাটা বলার ক্ষেত্রে আবেগে একটু স্লিপ অফ টাং হয়ে অতিরঞ্জিত হয়ে গেছে। তবে এভাবে বলাটা আমার ঠিক হয় নাই।’
আপনার নির্দেশের পর কেউ কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেললে তার দায় আপনি নেবেন কি না- এই প্রশ্নের উত্তরে এমপি বলেন, এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিও নাই। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটার সুযোগও নাই।সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের বক্তব্যের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। অন্য একটা প্রোগ্রামের কারণে আমার পৌঁছতে দেরি হয়েছে।’
জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এমপি মহোদয় কোন প্রেক্ষাপটে ওই বক্তব্য রেখেছেন, তার পুরো বক্তব্যের ভিডিও না দেখে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।’