ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শহিদুল ইসলাম। ঈদের ছুটি শেষে খুলনা থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি। শুক্রবার রাত ১২টায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় আসেন। এরপর দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার অপেক্ষা। তাও উঠতে পারেননি ফেরিতে।
দৌলতদিয়া ঘাটের ফেরির পল্টুন থেকে এক কিলোমিটার দূরে পুলিশ বক্সের সামনে শনিবার দুপুরে কথা হয় তার সঙ্গে। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে ফেরি পারের অপেক্ষায় আছি। ১২ ঘণ্টা পার হয়ে গেল, এখনও ফেরিতে উঠতে পারি নাই। এতক্ষণ যে কি ভোগান্তিতে আছি, এটা বলে বোঝাতে পারব না।’
ঈদের লম্বা ছুটি শেষে কর্মস্থলমুখী হতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। দুদিন ধরেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে রাজধানীতে ফিরছেন। এতে শুক্রবার বিকেল থেকেই এই রুটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শনিবার সকালে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাজার স্কুল পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার গাড়ির সারি দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ চাপ বাড়তে দেখা গেছে।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ফিরতি পথে এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শহিদুল ইসলামের মতো কর্মস্থলমুখী বহু যাত্রী ও চালকদের। প্রতিটি যানবাহনকে ফেরি পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা।
সুবর্ণ পরিবহন বাসের সুপারভাইজার আরেফিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টার দিকে ঘাটে এসেছি, এখন দুপুর ১২টা পার হয়ে গেল কিন্তু ফেরিতে উঠতে পারিনি। ১২ ঘণ্টা তো যানজটেই গেল। যাত্রীরা সব অস্থির হয়ে উঠছে।’
তরমুজবোঝাই একটি ট্রাকের চালক আকবর হোসেন বলেন, ‘তরমুজ নিয়ে রাতের মধ্যেই আমার কারওয়ান বাজার যাওয়ার কথা। সেখানে আজ দুপুর হয়ে গেল, এখনও ফেরিতে উঠতে পারি নাই। আজ সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছাইতে না পারলে লস হবে। আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই।’
খুলনা থেকে আসা যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর থেকে ঘাটের প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে আছি। ৬-৭ ঘণ্টা পার হলেও ফেরিতে উঠতে পারি নাই। স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েসহ ঢাকায় যাচ্ছি। মেয়েটা গরমে কান্নাকাটি করছে। এতক্ষণ অপেক্ষা করছি এখানে; কিন্তু বাথরুম, খাবার হোটেল না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাবউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছুটির শেষ দিন হওয়ায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। সবগুলো ফেরিই চলছে। চেষ্টা করছি ঘাটের লোড-আনলোড ক্লিয়ার রাখতে, যাতে ফেরির ট্রিপ না কমে।
এই রুটে এখন ছোট-বড় ২১টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সকাল থেকে ট্রাক পারাপার বন্ধ ছিল। বেলা ২টা থেকে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হবে’, যোগ করেন তিনি।