বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভুল চিকিৎসা’য় মা ও নবজাতকের মৃত্যু, পশু চিকিৎসক গ্রেপ্তার

  •    
  • ৭ মে, ২০২২ ০৯:১৮

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল হক বলেন, ‘আসামিকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ঘটনাটির আইনি দিকগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।’

নেত্রকোণার বারহাট্টায় ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে পশু চিকিৎসক আবুল কাশেমকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

এই ঘটনায় থানায় ওই প্রসূতির স্বামী বৃহস্পতিবার রাতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও শিশু হত্যার অভিযোগে মামলা করেন।

ওই রাতেই পুলিশ পলাতক আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে। একই দিন স্থানীয় প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে।

গত বুধবার দুপুর ২টার দিকে বারহাট্টার চন্দ্রপুর গ্রামে ওই প্রসূতি ও তার নবজাতক ছেলে শিশুর মৃত্যু হয়।

ওই প্রসূতির নাম শরীফা আক্তার। ২০ বছর বয়সী শরীফা চন্দ্রপুর গ্রামের হাইছ উদ্দিনের মেয়ে এবং পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নামাগাঁও গ্রামের মহসিন মিয়ার স্ত্রী।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর শরীফা বাবার বাড়িতে চলে আসেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক একই উপজেলার জীবনপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এলাকায় পশু চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষেরও চিকিৎসা করেন।

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল হক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শরীফার স্বামী মহসিন মিয়া জানান, বুধবার দুপুরে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। এ সময় তার বাবার বাড়ির লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আবুল কাশেমকে ডেকে নিয়ে আসেন। কাশেম শরীফার সন্তান প্রসবের রাস্তায় অস্ত্রোপচার (এপিওসটমি) করেন।

এ ছাড়া স্যালাইনের সঙ্গে কিছু ইনজেকশন দেন। এর কিছুক্ষণ পর শরীফার একটি ছেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটি মারা যায়। এর কিছুক্ষণ পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফাও মারা যান।

এদিকে ঘটনার পর আবুল কাশেম ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। স্থানীয় কিছু লোক তাকে পালাতে সাহায্য করেন।

শরীফার মা মাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা শরীফাকে নিয়ে নেত্রকোণা সদরের কোনো বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে চেয়েছিলাম। আবুল কাশেম আমাদের আশ্বস্ত করে বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে, কোনো সমস্যা হবে না।

‘তার কথায় ভরসা পেয়ে আমরা আর শরীফাকে নেত্রকোণায় নিয়ে যাইনি। আবুল কাশেম স্যালাইন ও কিছু ওষুধ এনে দিতে বলেছিলেন। তার কথামতো ওষুধ আনতে একজনকে মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরে পাঠানো হয়। তিনি ওষুধ নিয়ে আসার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়।’

এদিকে শরীফার মৃত্যুর পর আবুল কাশেম দাবি করেন, ‘আমি প্রসূতির সন্তান প্রসব করাতে চাইনি। শরীফার পরিবারের সদস্যরাই আমাকে দিয়ে জোর করে এই কাজ করিয়েছেন।’

ঘটনাটি তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমানের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।

অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা চৌধুরী ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন।

কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবারই তারা তদন্ত শুরু করেছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে উপস্থিত এলাকাবাসী, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।

‘বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে এপিওসটমি (যৌনাঙ্গ আংশিক কাটা) করা ও স্যালাইনের সঙ্গে ব্যথা বাড়ানোর ইনজেকশন দেয়ার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বাকি বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন পল্লী চিকিৎসকের এ ধরনের অস্ত্রোপচার করার কোনো প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান থাকার কথা না। তার কোনো প্রশিক্ষণ বা এ-সংক্রান্ত সনদ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখব।’

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল হক বলেন, ‘আমরাও আসামিকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ঘটনাটির আইনি দিকগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।’

এ বিভাগের আরো খবর