বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২ হাজারেরও বেশি সাপ উদ্ধার করেছেন এই তরুণরা

  •    
  • ৭ মে, ২০২২ ০৮:২৪

স্নেক রেসকিউ টিমের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান রাব্বি বলেন, ‘সাপ যেসব প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে, সেসব প্রাণীর অধিকাংশই ফসলের ক্ষতি করে। সাপের সংখ্যা কমে গেলে ওই প্রাণীগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাবে, যেটা বাস্তুতন্ত্রেরই নিয়ম। এতে কৃষকের ফসল আরও বেশি নষ্ট হবে।’

ঘরে সাপ প্রবেশ করেছে! চারপাশে তুমুল হইচই। লাঠি নিয়ে সাপ মারতে প্রস্তুত সবাই। শহরে তেমন না দেখা গেলেও গ্রামে প্রায়ই এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।

তবে স্রোতের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন কয়েকজন তরুণ। যারা সাপ মারতে নয়, উদ্ধারে নিয়োজিত। উদ্ধারের পর সেই সাপ বনে ছেড়ে দেন।

সাপ রক্ষায় কাজ করছে তরুণদের সংগঠন ‘স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ’ (এসআরটিবিডি)।

তাদের কেউই সাপুড়ে কিংবা ওঝা নন। এরপরও কোথাও সাপ দেখার খবর পেলেই ছুটে যান তারা। হাতে থাকা টুকটাক সরঞ্জাম দিয়ে উদ্ধার করেন বিভিন্ন প্রজাতির সাপ।

চট্টগ্রামে সাপের ত্রাণকর্তা বনে যাওয়া এসব তরুণ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী।

বিষধর এ প্রাণী উদ্ধার নিয়ে কথা হয় স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান রাব্বি এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফরহাদুল ইসলামের সঙ্গে। তাদের আলাপে উঠে আসে সংগঠনটির আদ্যোপান্ত।

কেন সাপ বাঁচানোর চেষ্টা

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গ্রাম অঞ্চলে এমনকি শহরেও সাধারণ মানুষের কাছে সাপ আতঙ্কের নাম। অথচ আমাদের দেশে যেসব সাপ সাধারণত দেখা যায় তার অধিকাংশই বিষহীন। সাপভীতির কারণে এটি দেখলেই মেরে ফেলাকে প্রথম কাজ মনে করে সাধারণ মানুষ।

‘সাপ যেসব প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে, সেসব প্রাণীর অধিকাংশই ফসলের ক্ষতি করে। সাপের সংখ্যা কমে গেলে ওই প্রাণীগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাবে, যেটা বাস্তুতন্ত্রেরই নিয়ম। এতে কৃষকের ফসল আরও বেশি নষ্ট হবে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ইঁদুরের কথা বলা হলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী ইঁদুর বছরে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে। আর একটি দাঁড়াশ সাপ অনায়াসে তিন একর জমির ইঁদুর মারতে পারে। আর প্রকৃতিতে শুধু তিনটি প্রাণী ইঁদুর মারে। সাপ ছাড়া অন্য দুটি হলো বেজি ও পেঁচা।

‘এর মধ্যে বেজির প্রধান ফোকাস মাছে, আর পেঁচার জন্য ইঁদুর ধরা সাপের চেয়ে অনেক কঠিন। তাই ইঁদুর মারতে হলে সাপ বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই।

‘এ ছাড়া শুধু বিষধর সাপের কথা যদি বলা হয়, সাপ থেকে পেইন কিলার, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে বিষধর সাপ যদি হারিয়ে যায়, তাহলে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাই সাপকে সংরক্ষণ করতে হবে।

‘সংরক্ষণ বলতে বাড়িতে পোষা না, দেশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলেই সংরক্ষণ করতে হবে। তাই আমরা মানুষের হাত থেকে সাপ উদ্ধার করে বনাঞ্চলে অবমুক্ত করি।’

স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘সাপ সংরক্ষণে ২০১৫ থেকে আমি একাই কাজ করতাম। একটা সময় মনে হলো, শুধু সাপ সংরক্ষণ করলে হবে না, মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বাড়ানো দরকার। তাই টিম করার কথা মাথায় আসে।’

১৫ থেকে আড়াই শ জনের পরিবার

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালের জানুয়ারিতে যখন এসআরটিবিডির যাত্রা হয় তখন সব মিলিয়ে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ জনের মতো। এর পর গত তিন বছরে সংগঠনটির সদস্য হয়েছে আড়াই শ জনের বেশি। তবে সরাসরি সাপ রেসকিউ করেন ২০ জনের মতো।

‘বাকিরা এখনও প্রোপার ট্রেইনড না। তাদের কাজ হলো কোথাও সাপ দেখা গেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে মূল উদ্ধারকারীদের জানানো আর মানুষ ও সাপকে নিরাপদ রাখা।’

সাপ উদ্ধার করতে গিয়ে বিপদে

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় সাপ উদ্ধার করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়তে হয়েছে সংগঠনের সদস্যদের। এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের দুই সদস্য বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়েছেন। এর মধ্যে আমি নিজেই দুই বার পদ্ম গোখরার কামড় খেয়েছি। একবার ২০১৫ সালে, তখন অবশ্য টিম ছিল না। আমি একাই কাজ করতাম।

‘ওই সময় একটি পদ্ম গোখরা সাপ উদ্ধারের পর বনে অবমুক্ত করার আগে অসাবধানতাবশত হাতে কামড়িয়ে ছিল। সৌভাগ্যক্রমে বিষ পুশ হয়নি শরীরে। হাসপাতালে এক দিন অভজারবেশনে ছিলাম। জ্বর ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ওই সময় অনেকটা অনভিজ্ঞ আর অসচেতন ছিলাম।

‘পরে কামড়িয়ে ছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে। ওই সময় চট্টগ্রামের লোহাগড়া থেকে একটি পদ্ম গোখরার বাচ্চা উদ্ধার করে বাড়িতে আনার পর অবমুক্ত করার আগের রাতে ব্যাগ পরিবর্তন করছিলাম। ওই সময় সাপটি কামড় দিয়ে দেয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বাসার কাছে হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে চলে গিয়েছিলাম। সে সময় তিন দিন থাকতে হয়েছিল হাসপাতালে।

‘এ ছাড়া গ্রামে সাপ উদ্ধার করতে গেলে সাধারণ মানুষ আমাদের হাতে কোনো বীণ না দেখলে মনে করে আমরা উদ্ধার করতে পারি না। বিভিন্ন সময় তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়।’

দুই বছরে দুই হাজারের বেশি সাপ উদ্ধার

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ করছে এসআরটিবিডি। এই দুই বছরে বিষাক্ত আর নির্বিষ মিলে দুই হাজারের বেশি সাপ উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেছে সংগঠনটি।

ফরহাদুল বলেন, ‘আমাদের প্রথম এক বছর সাপ উদ্ধারের কোনো হিসাব রাখা হয়নি। তবে ২০২১ সালের শেষের দিকে আমরা হিসাব করে দেখলাম শুধু চার মাসে সাত শর বেশি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই হিসাবে দুই বছরে আমাদের উদ্ধার করা সাপের পরিমাণ দুই হাজারের কাছাকাছি। তবে এটা কোনোভাবেই দুই হাজারের কম নয়। কারণ উদ্ধার করা সাপের সংখ্যার হিসাব না থাকলেও সাপগুলো বনে অবমুক্ত করার ছবি সংক্ষিত আছে আমাদের কাছে। সব মিলিয়ে আমাদের কাছে ছবি আছে ৬ হাজার। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় একাধিক ছবিও তোলা হয়েছিল।’

সাপ-মানুষের বিরোধ কবে দূর হবে

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সাপ যে পরিবেশ ও কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য উপকারী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশে সাপ ও মানুষের একটা চিরাচরিত বিরোধ আছে।

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রতি বছর সাপে কাটা রোগী মারা যান ছয় হাজার। এর কারণ হলো দেশে সাপে কাটার সুচিকিৎসা নেই। দেশের বিভাগীয় হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও এন্টিভেনম নেই। এ ছাড়া মানুষও অসচেতন, সাপে কাটলে অনেকে ওঝার কাছে যায়। এতেই মৃতের হারটা বাড়ে।

‘এখন প্রশ্ন হলো, সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুহার কমানো যাবে কীভাবে? এর একমাত্র উপায় হলো এন্টিভেনম। এটি সহজলভ্য হলেই মৃত্যুহার কমবে।’

সিদ্দিকুর বলেন, ‘আমরা আগে দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত এন্টিভেনম করতে চাই। এতে সাপের কামড়ে আগের মতো আর মানুষ মারা যাবে না। তখন সাপ আর মানুষের এই কনফ্লিক্ট পুরোপুরি কমে যাবে। আমি উদাহরণ হিসেবে কুকুরের কথা বলতে চাই, একসময় কুকুরের কামড়ে মানুষ মারা যেত, তখন প্রচুর পরিমাণে কুকুর মারা হতো। এখন কুকুরের কামড়ের ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, সহজে মানুষ মারা যায় না। তাই কুকুরের সঙ্গে মানুষের বিরোধ এখন আর নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর