ঈদ যাত্রায় এবার নদী পারাপারে ফেরিঘাটে ভোগান্তি না থাকলেও শহরমুখি ফিরতি যাত্রায় উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে শুক্রবার শহরমুখি মানুষের চাপ বেড়েছে অনেকটাই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থেকেও ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাচ্ছে না যানবাহনগুলো।
ফেরি স্বল্পতায় অনেকটাই ধীর গতিতে যানবাহন পারাপার করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রী ও চালকদের। তার উপর সন্ধ্যার সময় বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিবাতাস আর বৃষ্টি ভোগান্তি বাড়িয়েছে যাত্রীদের। বৃষ্টিতে ভিজে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে মোটরসাইকেলে আসা মানুষ।
বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, মাঝিরঘাট ফেরিঘাট দিয়ে পাঁচটি ফেরিতে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডাম্প ফেরি রায়পুরা ও রানীগঞ্জের ধারণক্ষমতা ৪০ থেকে ৪৫ টি যানবাহন। মাঝারি সাইজের ফেরি কুমিল্লা ও ফরিদপুরে ধারণক্ষমতা ১৬ থেকে ১৭ টি আর ফেরি কর্ণফুলীর ধারণক্ষমতা ৬ টি যানবাহন।
প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে দিনে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি যানবাহন চলে আসায় ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আশা করি সারারাত নিরবচ্ছিন্নভাবে পারাপার সম্ভব হলে যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে আসবে।’
শুক্রবার বিকেলে মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের সংযোগ সড়ক থেকে পুনর্বাসন কেন্দ্র পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। নদী পার হতে আসা প্রায় সবই প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস। সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলের জট ছিল চোখে পড়ার মতো।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ১ নং ঘাটে নোঙ্গর করে ফেরি রায়পুরা। শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা এই ফেরির যানবাহন নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফেরিতে ওঠার প্রতিযোগিতায় নামে যানবাহনগুলো।
এ সময় উল্টো দিক দিয়ে অনেক প্রাইভেট চালককে ফেরিতে ওঠার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এতে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
পরে বিআইডব্লিউটিসি ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কঠোর হস্তক্ষেপে সারিবদ্ধভাবে ফেরিতে উঠতে থাকে যানবাহনগুলো।
সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে যানবাহন বোঝাই করে শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ফেরিটি। শত শত যানবাহন তখনও অপেক্ষা করে ছিল।
সন্ধ্যার আগে হঠাৎ করে শুরু হয় ঘূর্ণি বাতাস আর বৃষ্টি। এতে সড়কে দাঁড়িয়ে ভিজতে দেখা গেছে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদেরকে।
বরিশাল থেকে সপরিবারে ঢাকা যাওয়ার পথে বেলা ২টায় মাঝিরঘাট এসে আটকা পড়েন ফাহমিদা আক্তার। পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পায়নি তাদের প্রাইভেটকারটি।
ফাহমিদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে আমার ছোট শিশু ও শাশুড়ি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব, তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। বাইরে তীব্র যানজট শিশুটিকে নিয়ে যে বের হব, তারও উপায় নেই।’
শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে মোটরসাইকেলে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ফেরিতে মোটর সাইকেলের পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহন পারাপার করায় ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাইনি। পরবর্তী ফেরির জন্য অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টিতে আমার সঙ্গে থাকা ব্যাগ, জামাকাপড় সব ভিজে গেছে। এখন ভেজা অবস্থায় ঢাকা যেতে হবে।’
মাঝিরঘাট ব্যবহার করে ফেরির পাশাপাশি ২০ টি লঞ্চ ও ৭৯ টি স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করা হয। ঈদে লম্বা ছুটির শেষ সময়ে এসে ফেরিঘাটের পাশাপাশি লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে।
শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চেই ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করছে।