আগের দিনের অপ্রীতিকর ঘটনায় পর্যটকদের মনে ভয় দেখা দিয়েছিল। পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে- এমন শঙ্কায় ছিলেন সংশ্লিষ্টরাও। তবে শঙ্কা ছাপিয়ে শুক্রবার ঢল নেমেছিল সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে।
শুক্রবার সকাল থেকেই সিলেটের গোয়ানঘাট উপজেলার জাফলংয়ে ভিড় করতে শুরু করেন পর্যটকরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট ও গুচ্ছগ্রাম এলাকায় পর্যটকের এমন ভিড় দেখা গেছে। তাদের মুখে আগের দিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা থাকলেও তা তাদের ঘুরে বেড়ানোয় কোনো প্রভাব ফেলেনি।
শুক্রবার থেকে জাফলং পর্যটনকেন্দ্রের নিরাপত্তাও জোরদার করেছে পুলিশ। এই বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ওই এলাকায় নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে। জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্বে ছিলেন।
এদিকে আগের দিনই সিলেটের জেলা প্রশাসক ঘোষণা দিয়েছিলেন ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে টানা সাত দিন জাফলং প্রবেশে কোনো ফি লাগবে না। ফলে এদিন প্রবেশ টিকিট বিক্রির কাউন্টারগুলো বন্ধ দেখা গেছে। ছিল না পিঠে ‘স্বেচ্ছাসেবক’ লেখা গাউন পরিহিত কেউই। এতে পর্যটকরা নির্বিবাদেই ঘুরে বেড়াতে পেরেছেন।
বৃহস্পতিবার জাফলং প্রবেশের জন্য নির্ধারিত টিকিট কাউন্টারে টিকিট কাটা নিয়েই এক পর্যটকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় উপজেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবীদের। বিতণ্ডার একপর্যায়ে পর্যটক দলকে মারধর করারও অভিযোগ ওঠে স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে। এ সময় কয়েকজন নারী পর্যটকও লাঞ্ছিত হন।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই এ ঘটনায় মামলা করেন আক্রান্ত পর্যটক সুমন সরকার। এই মামলায় পুলিশ সাতজনকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার কোনো প্রভাব শুক্রবার জাফলংয়ে ছিল না। যথারীতি বাস-মাইক্রোবাস ভরে পর্যটকদের জাফলংয়ে দলে দলে হাজির হতে দেখা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা তানভীর হাসান বলেন, ‘গতকালের ঘটনা শুনেছি। ফেসবুকে ভিডিও-ও দেখেছি। এ ঘটনায় কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। তবে এখানে আসার পরিকল্পনা অনেক আগেই করে রেখেছিলাম। তা ছাড়া ঈদের ছুটিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা শঙ্কা থাকলেও সাহস করে চলে এসেছি।’
জাফলংয়ে আসার পর কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি বলে জানিয়েছেন তানভীর।
সিলেটের তরুণ আবদুল্লাহ মো. আদিল বলেন, ‘আজ জাফলংয়ে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট কাটতে হয়নি। কাউন্টার বন্ধ ছিল। সবাই বাধাহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে।’
আগের দিনের ঘটনার কোনো প্রভাব শুক্রবার জাফলংয়ে পড়েনি জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকেও প্রচুর মানুষ এসেছেন। আজকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি হবে।’
তবে আগের দিনের চেয়ে শুক্রবার পর্যটক কম এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল তো সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছিলেন। এক দিনেই লক্ষাধিক পর্যটক ভিড় করেছিলেন এদিন।’
ঈদের পরদিন থেকেই জাফলংয়ে পর্যটকের ঢল নেমেছে জানিয়ে জাফলং গুচ্ছগ্রাম এলাকার গ্রিন রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বাবলু আহমদ বলেন, ‘আজও প্রচুর পর্যটক এসেছেন। পরিস্থিতিও আজ স্বাভাবিক ও শান্ত রয়েছে।’
পর্যটকরা আসায় স্বস্তি প্রকাশ করে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম পর্যটকদের মনে যাতে ভয় না ঢোকে। যাতে জাফলং নিয়ে কোনো নেতিবাচক ইমেজ তৈরি না হয়। এ জন্য যারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার ও মামলাও করা হয়েছে।’
গোয়ানঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম জানান, জাফলং ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যটন পুলিশের পাশপাশি নিয়মিত বাহিনীও কাজ করছে। সাদা পোশাকেও পুলিশ মাঠে রয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও শুক্রবার জাফলং এসে পরিদর্শন করে গেছেন।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর থেকে জাফলং পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশে পর্যটকপ্রতি ১০ টাকা ফি নির্ধারণ করেছিল জেলা প্রশাসন।