ঈদের আগে মহাসড়কে মোটরসাইকেলের কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন দেশজুড়ে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল। সহজে ট্রেনের টিকিট না পাওয়া, বাসে অনীহা আর নির্ভেজাল ভ্রমণের জন্যই বাড়ি যাওয়ার পথে এই বাহনটিকে বেছে নিয়েছিলেন অনেকে।
তবে জ্যামে আটকে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অনেকেই নাজেহাল হয়েছিলেন। ছুটি শেষে এবার ঢাকায় ফেরার পথেও একই রকম পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন বাইকাররা।
শুক্রবার মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা যাওয়ার পথে পদ্মা পার হয়ে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছাতে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে হাজার হাজার মোটরসাইকেলকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
এই রুটে মাত্র পাঁচটি ফেরি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার ছোট-মাঝারি পরিবহনসহ মোটরসাইকেলও পার করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ফলে হাজারও মোটরসাইকেল ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন আরোহীরা। অসহনীয় রোদের মধ্যে সারিবদ্ধ বাইক রাস্তায় রেখেই অনেকে ছায়াযুক্ত স্থানে গিয়ে অপেক্ষা করছেন।
এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, বিশেষ ব্যবস্থায় একটি ঘাট বাইকারদে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে বাইকারদের অভিযোগ, মোটরসাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট করা হলেও এই ফেরি দিয়ে কৌশলে অন্যান্য গাড়িও এনে তোলা হচ্ছে। আর ফেরির সংখ্যা কম থাকায় তাদের পদ্মা পার করতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।
শুকবার দুপুর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাবাজার নৌরুটের চার নাম্বার ঘাটের পল্টুনে দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক মোটরসাইকেল। আর পল্টুন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সহস্রাধিক বাইক দাঁড়িয়ে আছে।
এ সময় পল্টুনের ওপরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেককে শরীরের ঘাম ঝরাতেও দেখা গেছে। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর পর একটি ছোট ফেরি ঘাটে আসছে। তাতে দেড় থেকে পৌনে দুই শ’ মটরসাইকেলের জায়গা হচ্ছে। বাকিরা অপেক্ষা করছে।
এভাবে অনেকেই সকাল ৮টায় এসে দুপুর ৪টার দিকেও ফেরিতে উঠতে পারেননি। বরিশালের গৌরনদী থেকে আসা কামরুল হাসান বলেন, ‘ঈদে বাইক নিয়ে আসছিলাম আনন্দে করে ঢাকায় ফিরবো। কিন্তু ঘাটের যে অসহনীয় দুর্ভোগ তাতে পুরো আনন্দই মাটি হয়ে গেল। এতো কষ্ট আমি কখনোই পাইনি। সকাল ৮টায় এসেছি এখন বেলা ৩টা বাজে। তবু ফেরিতে উঠতে পারিনি।’
ফেরি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাকে দোষারোপ করে উজ্জ্বল হোসেন নামে আরেক বাইকার বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ অন্য ঘাট থেকে মাইক্রো আর প্রাইভেটকার নিয়ে চার নাম্বার ঘাটে আসে। এতে দুই ঘাটে লোড-আনলোড হতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। ফলে পারাপার হতেও বেশি সময় লাগে। যদি একটি ফেরি শুধু মোটরসাইকেলের জন্যই রাখতো, তাহলে এত দুর্ভোগ হতো না।’
মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত করা হলেও বাংলাবাজার ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারও পার করা হচ্ছে
বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি এর একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে বাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে বাংলাবাজার ঘাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ ও স্পিডবোট ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ।
এ অবস্থায় ফেরিগুলোতে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন, কাঁচামালবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। তবে সীমিত সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন বলেন, ‘এই রুটে পাঁচটি ফেরি দিয়ে যাত্রী, জরুরি গাড়ি ও কাঁচামালবাহী গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। কিছু গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় আছে। আমরা সিরিয়াল অনুযায়ী সব গাড়ি পার করছি। আর চার নাম্বার ঘাট দিয়ে শুধু মোটরসাইকেল পার করছি। প্রতিটি বাইকের জন্যে ৭০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। যদি কেউ বেশি ভাড়া চায়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করছি।’