ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে রাজধানীমুখী মানুষ ফিরতে শুরু করেছেন। ব্যক্তিগত যানবাহন ও যাত্রীবাহী পরিবহনে চাপ বেড়েছে ঘাটে। তবে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে এখনও ভোগান্তি দেখা যায়নি।
যেসব যানবাহন ফেরি পারের জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে সেগুলো সহজে নদী পারাপার হয়ে গৌন্তব্যস্থানে যেতে পারছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত শুধু যাত্রীবাহী বাসের সারি রয়েছে। প্রতিটি যাত্রীবাহী বাস এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে ফেরিতে উঠছে। অন্যদিকে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ জানায়, দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন নদী পারাপার করার জন্য ১৯টি ছোট বড় ফেরি ও ১৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। এখনও অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীর চাপ আরও বেড়ে গেলে আরও দুটি ফেরি যুক্ত করা হবে এই নৌরুটে।
খুলনা থেকে আসা হাসিফ শেখ বলেন, ‘ঘাটে যানজট থাকবে এটা ভেবেই ভোরের দিকে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছি। ঘাটে যতটা যানজট হবে ভেবেছিলাম ততটা হয়নি। এক ঘণ্টার মধ্যেই ফেরিতে উঠতে পেরেছি।’
ফরিদপুর থেকে আসা যাত্রী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বেসরকারি একটা চাকরি করি। আগামীকাল অফিস আছে। তাও আজকেই ঢাকায় রওনা হয়েছি। সরাসরি ফেরিতে উঠেছি। পাটুরিয়া থেকে কোনো বাসে চলে যাব।’
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ‘এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির করতে বিআইডাব্লিউটিসির উদ্যোগ আপনারা দেখেছেন। আশা করছি, এখন কর্মক্ষেত্রে ফেরা মানুষের ফিরতি যাত্রাও স্বস্তিরই হবে।’
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। প্রচণ্ড রোদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে ফেরির চেয়ে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বেশি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরি ও লঞ্চে ঈদ ফেরত যাত্রীদের ভিড়। যাত্রীদের সঙ্গে ফেরিতে বাড়ছে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির সংখ্যা। অপরদিকে প্রতিটি লঞ্চেও রয়েছে যাত্রীদের চাপ।
বিআইডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা জানান, ঈদে ঘরমুখো ও ঈদ ফেরত যাত্রী এবং যানবাহন পারাপারের জন্য ২১টি ফেরি চলাচল করছে। পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ না থাকলেও দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ রয়েছে। ঘাটে ফেরি আনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ও যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারছে।
ঢাকাগামী যাত্রী হাসনা হেনা আক্তার বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে দৌলতদিয়ার রাস্তায় কোনো ভোগান্তি হয় নাই। কিন্তু ফেরিতে উঠতে ভোগান্তি পোহাতে হইছে।’
ফরিদপুর আসা যাত্রী হোসেন আলী বলেন, ‘ফেরিতে ভোগান্তির কারণে লঞ্চে পার হইছি। কারণ ঘাটে যাত্রী থাকতেও ফেরি মাস্টাররা দেরিতে ফেরি ছাড়ে। গাড়িতে গরমে কষ্ট করতে হয়েছে। তারপর ফেরি ঘাটে এসে রোদে অপেক্ষা করতে হয়।
সাভারগামী আকলিমা আক্তার বলেন, ‘ফেরি পারাপারে তেমন কষ্ট না হলেও ফেরি থেকে নেমে কষ্ট করতে হচ্ছে। কারণ পাটুরিয়া ঘাটে কোনো বাস নাই। হেটে বা রিকশায় করে আবার বাসের কাছে যেতে হচ্ছে। এতে করে আবার অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’
যাত্রী আবুল হোসেন জানান, ‘ফেরি পারের জন্য ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। বাসের কাছে যেতে আবার ৪০ টাকা দিতে হচ্ছে রিকশায়। ঘাট এলাকায় বাস থাকলে আমাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হতো না। ঈদের পর এমনিতেই টাকা থাকে না। এর মধ্যে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’
পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দি বলেন, ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২১টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পার করা হচ্ছে। পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ না থাকলেও দৌলতদিয়া ছেড়ে আসা লঞ্চে যাত্রীর চাপ রয়েছে। যাত্রীরা নিরাপদে লঞ্চে পার হতে পারছে।’
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, ঈদের পর পুরদমে রোববার অফিস, কারখানা খুলবে। তাই ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি নাই। ফেরি থেকে নেমে একটু সামনে গেলেই বাসে উঠতে পারছে। যাত্রী ও যানবাহন পারের জন্য ২১টি ফেরি চলাচল করছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে।
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ গত কয়েক দিনের তুলনায় স্বাভাবিক রয়েছে। ভোর সকালে যানবাহনের চাপ কিছুটা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে।
তবে লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীদের চাপ আগের মতো রয়েছে। শিমুলিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় শতাধিক যানবাহন।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-মাঝিকান্দি নৌরুটে ১০টি ফেরি দিয়ে ২৪ ঘন্টা যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
১৫৫টি স্পিডবোট ও ৮৫টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ শিমুলিয়া ঘাটের বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন।
জামাল হোসেন আরও জানান, কাল থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল অফিস আদালত চালু থাকায় শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় বাড়তি যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ যানবাহনের চাপ কিছুটা কম। ফেরিঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক যানবাহন।
বিআইডব্লিউটিএ শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীদের বাড়তি চাপ রয়েছে। তবে ঢাকামুখী যাত্রীর সংখ্যা বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে পারে।’