আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দেশ নয়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে এখানেও বাড়বে।
বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ৩৮ টাকা আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৪৪ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর দিন নারায়ণগঞ্জে একটি আয়োজনে গিয়ে এই মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
জেলার সাইনবোর্ড এলাকায় শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে সড়ক উন্নতকরণ প্রকল্প পরিদর্শন করতে গিয়ে তেলের দাম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, এটা আমাদের প্রতিদেশী দেশসহ অনেক দেশে ডাবলেরও বেশি বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের দামে প্রভাব পড়েছে। ফুড প্রাইস তেল জ্বালানি সব কিছুর দাম সারা বিশ্বেই বাড়ছে। বাংলাদেশ তো আইসোলেটেড আইল্যান্ড না। কাজেই প্রভাব তো পড়বেই, কিছু করার নেই।’
কিন্তু এতে যে মানুষের কষ্ট হচ্ছে- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘মানুষ কষ্ট পাবে না, শেখ হাসিনা সত্যিকার অর্থেই সংকটে ক্রাইসিস ম্যানেজার। একজন ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে তিনি করোনা সংকটেও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে, কমনসেন্স দিয়ে তিনি প্ল্যান করেছেন, সমাধান করেছেন।
‘সংকট আসবেই, পৃথিবীতে যুদ্ধ চলছে, সংকট আসবে। কিন্তু সেটি মোকাবিলা করার মতো সাহস ও সততা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আছে।’
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে সারা বিশ্বেই। রোজা চলাকালে পাম তেলের বড় সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।
ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে রোজার আগে সরকার পাঁচ শতাংশ রেখে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে সব ধরনের ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার পর লিটারে দাম কমানো হয় ৮ টাকা। এক মাসও স্বস্তিতে কাটাতে পারেনি দেশবাসী।
ঈদের আগে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায় তেল। ব্যবসায়ীরা জানান, যে দামে তাদের তেল কিনে আনতে হয়েছে, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে হলে অনেক বেশি লোকসান দিতে হয়।
ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তেলের নতুন দাম জানায়।
মানুষের স্বস্তিতে বিএনপি বেজার বারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘ঈদে মানুষের আনন্দটা হাসিমুখে দেখেছি। রাস্তা থেকে যাত্রীদের ভোগান্তির টেলিফোন পাইনি। এ কারণে ঈদটা ভালই কেটেছে।
‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার সড়কের অবস্থা ভাল। এছাড়া যারা হাইওয়ে পুলিশ আছেন, মালিক-শ্রমিক, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে এরা সবাই যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে নতুন প্ল্যান করে সেখানে ব্যবস্থা করেছে। তিনটা ফ্লাইওভার করা হয়েছে। নলকা ব্রিজটা অনেক বড় সমস্যা ছিল, এটা আমরা নতুন করেছি। এ কারণে এবার ঝুঁকিও কম ছিল।’
‘এবারের ঈদে মানুষের শান্তি ছিল না’ -বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘মানুষ যদি আনন্দ পায় বিএনপির কষ্ট লাগে, তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। সরকারের ভাল কাজ তাদের সহ্য হয় না।’
প্রায় তিন বছর পর ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার নিজ এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ যান। ২০১৯ সালে ঈদুল আজহার পর শেষবার এলাকায় গিয়েছিলেন কাদের। পরের দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে ঈদ কেটেছে ঢাকায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে অনেকদিন পরে গিয়েছি, বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেছি। সেখানে বহু মানুষের ঢল নেমেছিল।’
প্রকল্প পরিদর্শনকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।