বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হারিয়ে যাওয়া আ.লীগের দাপুটে নেতারা এখন যেমন

  •    
  • ৬ মে, ২০২২ ১২:১৯

এক-এগারোর সময় ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে ভূমিকা পালন করায় অনেকে দলে গুরুত্ব হারিয়েছেন, কেউ দল থেকেই ছিটকে পড়েছেন, আবার কেউ ছিটকে গিয়ে ফিরে এসেছেন। তবে তারা কেউ আর আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারেননি।

আশির দশকের শেষ দিকে এসে আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকেন নেতৃত্বের নতুন একটি প্রজন্ম। ’৯০-এর দশকে এরা দলে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে নেন। কিন্তু ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় সংস্কার তথা দলের সভাপতির বিরুদ্ধে গিয়ে দলে অবস্থান-পদ-প্রভাব সবই হারান তারা। অনেকে দল থেকেই ছিটকে পড়েন।

ছিটকে পড়াদের অন্যতম হলেন তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাহমুদুর রহমান মান্না, তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, প্রয়াত ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক নাজমা রহমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হাবিবুর রহমান খান প্রমুখ।

অবস্থান হারিয়ে দলে টিকে থাকেন বা পরবর্তী সময়ে ফিরে আসেন তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবের হোসেন চৌধুরী, আখতারুজ্জামান, প্রয়াত সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, প্রয়াত অর্থ সম্পাদক অধ্যাপক আলী আশরাফ, প্রয়াত কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রমুখ। এদের মধ্যে নাজমা রহমান মৃত্যুবরণের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসতে পারেননি। আর আলী আশরাফ এবং জাহাঙ্গীর হোসাইন মৃত্যুবরণের আগে দলে ফিরলেও অবস্থান-প্রভাব কোনোটাই ফিরে পাননি।

ব্যবসাতেই মনোযোগ মুকুল বোসের

একসময়ের প্রতাপশালী ছাত্রনেতা মুকুল বোস এক-এগারোর সময় ছিলেন দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বস্তুত তাকেই তখন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এক-এগারোর আবির্ভাব পাল্টে দেয় সবকিছু। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল গ্রেপ্তার হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

দলের এক সিনিয়র নেতার পরামর্শে প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই তিনি দলের সভাপতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে লন্ডন থেকে ফিরিয়ে এনে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে।

পরবর্তীকালে দলের ২০০৯ সালের সম্মেলনে কমিটি থেকেই বাদ পড়েন মুকুল বোস। দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দলের ২০তম সম্মেলনে কমিটিতে জায়গা পেলেও দলে অবস্থান ফিরে পাননি মুকুল বোস। ১০ জানুয়ারি ২০১৭ সালে তাকে প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য করা হলেও ২১ দিন পর ৩১ জানুয়ারি তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। এখন শেয়ার বাজারের ব্যবসা নিয়ে দিন কাটে তার। মতিঝিলে ছোট্ট একটা অফিসে বসে ব্যবসা চালান তিনি।

বর্তমান রাজনৈতিক সক্রিয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে মুকুল বোস নিউজবাংলাকে জানান, দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত করেন। উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠক হলে অংশ নেন। কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও উপস্থিত থাকেন।

টিকে আছেন সাবের হোসেন চৌধুরী

এক-এগারোর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা। ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব। কিন্তু এক-এগারোর নেতিবাচক ভূমিকা তাকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও দলের ২০০৯ সালের সম্মেলনে দলীয় পদ হারান সাবের হোসেন চৌধুরী। প্রভাব-প্রতিপত্তি হারান তারও আগে। এক-এগারোতে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার সময় যথাযথ ভূমিকা পালন না করাসহ এক-এগারোর কুশীলবদের নিয়ে বাড়িতে বৈঠক করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। দলে আর পদ না পেলেও প্রতিবারই মনোনয়ন পেয়েছেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী টানা কয়েকবার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-৯)। এ ছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ১৬ অক্টোবর ২০১৪ সালে তিন বছরের জন্য ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ২৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পারিবারিকভাবে তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কর্ণধার। ব্যবসা আর সংসদসংক্রান্ত কার্যক্রমের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় রাজনীতির মাঠে টিকে আছেন তিনি।

বর্তমান রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানার জন্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংসদের রুটিন রাজনীতিতে সুলতান মনসুর

১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি পদে তার বিজয় ছিল ’৭৫-পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো জয়। কিন্তু ‘সংস্কারপন্থি’ হওয়ায় ২০০৯ সালের সম্মেলনে দলের পদ হারান।

আওয়ামী লীগ থেকে পদ হারিয়ে দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। যোগ দেন আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের নেতা হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী হন সুলতান মনসুর। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় তাকে দল ও জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর থেকে আবারও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি।

২০২০ সালের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে নিজ নির্বাচনি এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার ‘রুটিন রাজনীতিতে’ সীমাবদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতির রাজনৈতিক ভূমিকা। এলাকার সামাজিক-রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে তাকে দেখা যায় না। সংসদীয় এলাকার কোনো দাপ্তরিক কাজ থাকলে সেটা তিনি ঢাকায় বসেই করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘একবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বাইরে খুব একটা বের হই না। আর দেশে তো এখন রাজনীতি নেই। তবে নিয়মিত সংসদ অধিবেশনে যোগ দিই।’

নিভৃতে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

এক-এগারো পূর্ববর্তী সময়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের তথ্যবিষয়ক সম্পাদক, যদিও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার প্রভাব ছিল পদের মর্যাদার তুলনায় অনেক বেশি। ‘সংস্কারের’ পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন হারান। ২০০৯ সালের সম্মেলনে হারান দলীয় পদ।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই নির্বাচনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তিনি। পরে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার পর ২০১৮-এর নির্বাচনের আগে সক্রিয় হন। নভেম্বর মাসে যোগ দেন গণফোরামে। পাবনা-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে যান। এখন অনেকটা নিভৃতে জীবন-যাপন করছেন।

নাগরিক ঐক্যে মাহমুদুর রহমান মান্না

ছাত্রনেতা হিসেবেই জনপ্রিয় ছিলেন। দল পরিবর্তন করেছেন কয়েকবার। ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে ফেরা মাহমুদুর রহমান মান্না ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দলটিতে অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে পড়েন। এখন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি।

১৯৭২ সালে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন। ১৯৭৯ ও ৮০ সালে দুইবার ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এরপর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০৭ সালে আলোচিত এক-এগারো সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের পদ থেকে বাদ পড়ে যান।

বর্তমানে মান্না নাগরিক ঐক্যের সভাপতি হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির নেতা হিসেবে সক্রিয় আছেন। জোটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক থেকে সভাপতি হন তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না নিউজবাংলাকে জানান, তিনি রাজনীতিতে আছেন, রাজনীতিতে থাকবেন। নাগরিক অধিকারের দাবিতে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, সেটা আজ রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অতীতে সময়ের দাবিতে একাধিক সংগঠনে থাকলেও এখন নাগরিক ঐক্য নিয়ে জনগণের পাশে থাকতে চান।

জেলা পরিষদে আখতারুজ্জামান

বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং গাজীপুর জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্ববায়ক হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৭৯ ও ৮০ সালে দুবার ডাকসুর জিএস এবং ১৯৮১ সালে ভিপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ‘সংস্কারপন্থি’ তকমা তারও কপাল পোড়ায়। দল থেকে বাদ না পড়লেও পদাবনতি হয়। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে একই পদে পুনর্নির্বাচিত হন।

আখতারুজ্জামান পরবর্তী সময়ে গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন। এখনও তিনি সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এ বিভাগের আরো খবর