আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ সফর নিয়ে নানা আলোচনা এলাকাজুড়ে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা বাড়িতে গিয়ে যাদের দ্বারা আপ্যায়িত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা, যার আক্রমণে গত এক বছরে বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন কাদের।
প্রায় তিন বছর পর ওবায়দুল কাদের গেলেন নিজের এলাকায়, যেখানে আওয়ামী লীগ নানাভাবে বিভক্ত।
২০১৯ সালে ঈদুল আজহার পর শেষবার এলাকায় গিয়েছিলেন কাদের। পরের দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে ঈদ কেটেছে ঢাকায়। এবার বিধিনিষেধহীন সময়ে আবার গেলেন তিনি শিকড়ের টানে।
তবে এই সফর শেষ পর্যন্ত পারিবারিক আয়োজন থাকেনি। কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতির কারণে রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের এই সফরে গিয়ে তার আলোচিত ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার মন রক্ষার চেষ্টা যেমন করেছেন, তেমনি ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের আয়োজনেও অংশ নিয়েছেন। দিয়েছেন ঐক্যের ডাক।
এসব ছাপিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা দুই ভাইয়ের মধ্যে কী কথা হলো, ভাইকে স্বাগত জানিয়ে মির্জার আয়োজনইবা কী ছিল।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওবায়দুল কাদের নিজ বাড়িতে পৌঁছলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান কাদের মির্জা।
এরপর দুই ভাই দোয়া করতে যান বাবা-মায়ের কবরে। পরে কাদের যোগ দেন ছোট ভাইয়ের আপ্যায়নে।
কাদেরের দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন মির্জা। দুই ভাই মধ্যাহ্নভোজ সারেন একসঙ্গেই।
বড় ভাইকে ঈদের আপ্যায়ন প্রসঙ্গে মির্জা বলেন, ‘ওনার আপ্যায়নের জন্য কোনো আইটেম বাকি রাখি নাই। ওনার পছন্দের ভেড়া মাংস, নদীর মাছ, লইট্টা মাছ ও শাকসবজি দিয়ে উনি দুপুরের খাবার খেয়েছেন।’
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওবায়দুল কাদেরের এই নির্বাচনি এলাকাটি গণমাধ্যমের আলোচনায় এসেছে।
শুরুটা করেন কাদের মির্জা। গত পৌরসভা নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামার পর তিনি কাদেরের বিরুদ্ধেও ক্রমাগত বক্তব্য রাখেন। পরে সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদের বিষয়টি সামনে আসে।
মির্জা গত এক বছরে বারবার তার ভাই ও ভাবিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে স্থানীয়ভাবে সংগঠন পড়েছে বেজায় নাজুক অবস্থায়।
ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কী নিয়ে কথা হয়েছে- জানতে চাইলে কাদের মির্জা বলেন, ‘তার সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো কথা হয় নাই। পারিবারিক বিষয় ছাড়া কোনো কথা হয় নাই। আমার সঙ্গে আগেই কথা হয়েছে, তিনি ঈদের শুভেচ্ছা ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলবেন না।’
প্রতিদ্বন্দ্বী বাদল আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনীতে কাদেরের যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা জানান, এ নিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে তার আগেই কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভাই বলেছে, তোমরা সবাই যদি বলো তাহলে ওদের (প্রতিপক্ষ বাদল) সঙ্গে দেখা করব, কিন্তু কোনো বক্তব্য দেব না। আমি এটার সঙ্গে একমত হয়েছি। তাই এ বিষয়ে কোনো কথা বলি নাই, প্রয়োজনীয়তাও মনে করি নাই। আমরা কাজে বিশ্বাস করি। নেতাকর্মীরা আমার পাশে আছে। আমি কারও বিরুদ্ধে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। আমি কাজ করে এ পর্যন্ত পৌঁছেছি এবং কাজের মধ্য দিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চাই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই।’
মির্জার দ্বারা আপ্যায়িত হওয়ার পর কাদের যান বসুরহাট ডাকবাংলোয় ছোট ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমান বাদলের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনীতে।
সেখানে তিনি গিয়ে দেন ঐক্যের ডাক। বলেন, ‘আর কোনো সংঘাত নয়, আর কোনো বিবাদ নয়, আমি চাই ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। এ জন্য আজকে প্রথম এসেছি, সবাইকে নিয়ে আমি এটার সমাধান করব। আমি দুপক্ষকেই ঢাকা ডাকব। দুপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে এ সমস্যার সমাধান করব।’