শরীয়তপুরের চিতলিয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি কুদ্দুস ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে পালং মডেল থানায় মামলাটি করেন নিহতের ছেলে লিটন ব্যাপারী।
মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন হাওলাদারের ছেলে সোহান হাওলাদারকে প্রধান আসামি করে ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ও প্রতিপক্ষের হামলার আশঙ্কায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে চিতলিয়ার মজুমদারকান্দি গ্রাম। এই ফাঁকে মামলার আসামি ও হারুনের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ছালাম হাওলাদারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
পালং মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার ঘটনায় বুধবার রাতে ৬৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের ছেলে লিটন ব্যাপারী। মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর পুলিশ।
আসামি ও প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের বিষয়ে ওসি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মজুমদারকান্দি গ্রামের নারীরা থানায় এসে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সামনে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুস ব্যাপারীর স্বজনদের কান্না। ছবি: নিউজবাংলা
মামালর বাদী লিটন ব্যাপারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে থেকেই গ্রামের মানুষ দুটি দলে বিভক্ত। আমাদের পরিবার ছালাম হাওলাদারের সমর্থক। এর আগেও হারুন হাওলাদরের ছেলে সোহান হাওলাদার দলবল নিয়ে একাধিকবার আমাদের মারধর করেছে। ঈদের দিন নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় সোহানের হুকুমে সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আশপাশে অনেকে থাকলেও ওদের অস্ত্রের সামনে যেতে সাহস পায়নি কেউ। আমরা বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে মজুমদারকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হারুন হাওলাদারের সমর্থকদের বাড়িঘর পুরুষশূন্য। গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। হামলাকারীরা বাড়িতে থাকা মূল্যবান জিনিপত্র লুট করে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ছাড়া হারুন সমর্থকদের অন্তত ১০ থেকে ১২টি গরু-ছাগলও জবরদস্তি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আসামি ওহিদুজ্জামান ফরায়জীর স্ত্রী মাহামুদা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ঘটনার সময় বাড়িতে ছিল। শুধু হারুন হাওলাদারের দল করায় তাকে আসামি করা হয়েছে। মারামারির পর গ্রামের সব পুরুষ পালিয়ে গেছে। রাতে বেলায়েত মাদবর, ইউনুস খাঁ ও মেহেদীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে ভাঙচুর করে মূল্যবান সব জিনিসপত্রের সঙ্গে চাল, ডাল, তেল, এমনকি গ্যাসের সিলিন্ডা্রও নিয়ে গেছে। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও নেই। তার ওপর আবারও হামলার আতঙ্কে আছি।’
প্রতিপক্ষের হামলায় আসামিদের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব ফজিলা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাইতে ছালামের দলের আউয়াল, মানিক ও দেলোয়ার দলবল লইয়া বাড়িতে হামলা করে। আলমারি ভাইঙ্কা নতুন বউয়ের সব গয়নাগডি লইয়া গেছে। আমার গলায় একটা চেন আছিল হেইডাও লইয়া গেছে। যাওনের সময় চাউল, ডাইল, তেল লইয়া গেল। বাড়িতে খাওনের কিছু নাই। অগো ডরে পোলা আমার বাড়িতে আইতে পারে না। অহন আমরা কী খাইয়া থাকুম।’
গত মঙ্গলবার ঈদের নামাজ শেষে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চিতলিয়ায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন হাওলাদার ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছালাম হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে চিতলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কুদ্দুস ব্যাপারী নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ২০ জন।