নিজ নির্বাচনি এলাকা নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষকে মিলেমিশে থাকার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দুই পক্ষকে ঢাকায় তার কাছে আসতেও বলে এসেছেন কাদের।
ওবায়দুল কাদের ৩৩ মাস পর কোম্পানীগঞ্জে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা কাদেরকে তাকে পৌরসভার পক্ষ থেকে বীর সম্মাননা ৭১ দেন এবং দুপুরে প্রীতি ভোজের আয়োজন করেন।
বেলা ২টার দিকে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা বসুরহাট ডাকবাংলোয় ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। একপর্যায়ে তাদের সেই অনুষ্ঠান জনসভায় রূপ নেয়। সেখানেও যোগ দেন কাদের।
বাদলদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দিয়ে আসেন ঐক্যের ডাক। বলেন, ‘আর কোনো সংঘাত নয়, আর কোনো বিবাদ নয়, আমি চাই ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। এ জন্য আজকে প্রথম এসেছি, সবাইকে নিয়ে আমি এটার সমাধান করব। আমি দুপক্ষকেই ঢাকা ডাকব। দুপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে এ সমস্যার সমাধান করব।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, ওবায়দুল কাদেরের তিন ভাগনে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুব রশিদ মঞ্জু, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজীস সালেকিন রিমন, স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ সদস্য ফখরুল ইসলাম রাহাত সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বাদল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (ওবায়দুল কাদের) আমাদের ঢাকায় যেতে বলেছেন। ঢাকায় বসে এটার সমাধান করবেন।’
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওবায়দুল কাদেরের এই নির্বাচনি এলাকাটি গণমাধ্যমের আলোচনায় এসেছে।
শুরুটা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ভাই আবদুল কাদের মির্জা। গত পৌরসভা নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামার পর তিনি কাদেরের বিরুদ্ধেও ক্রমাগত বক্তব্য রাখেন। পরে সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদের বিষয়টি সামনে আসে।
কাদেরের ভাই মির্জার সঙ্গে বিরোধ দুই পক্ষের। ১. মিজানুর রহমান বাদল, যার পাশে আছেন ওবায়দুল কাদেরের তিন ভাগনে, ২. সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
কাদের মির্জা ও বাদলের অনুসারীদের বিরোধের জেরে গত কয়েক মাসে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক সাংবাদিকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হন প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী।
পাল্টাপাল্টি ৭২টি মামলা হয়। এতে আসামি হন উভয় পক্ষের প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মী। এখনও বাড়ি ছাড়া হাজার হাজার মানুষ। ঈদ উদযাপনেও বাড়ি আসতে পারেননি তারা।
আবার কাদের মির্জা গত এক বছরে বারবার তার ভাই ওবায়দুল কাদের ও ভাবিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে স্থানীয়ভাবে সংগঠন পড়েছে বেজায় নাজুক অবস্থায়।
নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুলের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা পুরোনো। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী সদরের পাশাপাশি এই আসনটিতেও (নোয়াখালী-৫) মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে কাদের যখন শেষবারের মতো বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের কাছে হারেন, তখন তার এই পরাজয়ের কারণ ছিলেন একরামুল। তিনি সে সময় নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। কাদের ও তার মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হওয়ার পর জয় পান মওদুদ। তবে আওয়ামী লীগের দুজনের ভোট ছিল বিএনপি নেতার ভোটের চেয়ে বেশি।
বাদলের সঙ্গে মির্জার বিরোধের সমাধানের বিষয়ে কথা বললেও একরামুলের বিষয়ে কিছু বলেননি ওবায়দুল কাদের।
মির্জার প্রতিদ্বন্দ্বী বাদল বলেন, ‘কাদের মির্জা অপপ্রচার করে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি গুজব ছড়িয়েছেন, কাদের ভাই আমাদের প্রোগ্রামে আসবেন না। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তার প্রোগ্রামে কোম্পানীগঞ্জে গুটিকয়েক লোক ছাড়া নেতাকর্মীরা যায় নাই। দাগনভূঞা, চৌমুহনী, বেগমগঞ্জ, সোনাগাজী ও সেনবাগের লোকজন জমায়েত করেছে। তার অপপ্রচারের পরও হাজার হাজার নেতাকর্মী আমাদের সমাবেশে এসেছে। আমরা সার্থক মন্ত্রী মহোদয় শিডিউল ছাড়াই আমাদের প্রোগ্রামে এসেছেন।'
কাদের ডাকলে যাবেন কি না জানতে চাইলে বাদল বলেন, 'তিনি আমাদের নেতা, আমাদের তো আশাবাদী হতেই হবে। কিছু করার নেই। আর যদি তিনি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান না দেন, তাহলে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব।'
কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান বলেন, 'তিনি (ওবায়দুল কাদের) সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। পরে তিনি আমাদের ১০ জনকে ঢাকায় যেতে বলেছেন। তিনি ডাকলে আমরা ঢাকায় যাব।'
ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা নিউজবাংলাকে বলেন, 'নেতাকর্মীরা আমার পাশে আছে। আমি কারও বিরুদ্ধে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। আমি কাজ করে এ পর্যন্ত পৌঁছেছি।'