ফরিদপুরের সালথায় প্রতিপক্ষের হামলায় একজনের প্রাণহানির পর তুলকালাম ঘটনা ঘটে গেছে।
প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামের ঠাকুরপাড়ায় এ ঘটনার সূত্রপাত।
হামলায় প্রথমে প্রাণ হারান ২৭ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম। তিনি খারদিয়া ঠাকুরপাড়া এলাকার ইশারত মোল্লার ছেলে।
সোনাপুর বাজারে একটি করাতকলে শ্রমিকের কাজ করতেন সিরাজুল। তিন মাস আগে তিনি বিয়ে করেন।
এ মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গোটা খারদিয়া এলাকার মিয়াপাড়া, ঠাকুরপাড়া, বড় খারদিয়াসহ বিভিন্ন বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এলাকাবাসী জানান, অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যদুনন্দী ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থক রফিক মোল্লার সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল।
গত ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের আগে সংঘর্ষে নিহত হন মারিচ সিকদার নামে একজন। তিনি রফিক মোল্লার সমর্থক ছিলেন।
রফিক মোল্লা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গত ২১ এপ্রিল এই দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
সে সময় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের ওপর হামলার আসামি করা হয়।
গত ২৮ এপ্রিল রফিক ও আলমগীরকে আদালত জামিন দেয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে আবার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
গত বুধবার আলমগীরের সমর্থক লুৎফরকে আটক করে রফিকের সমর্থকরা। পরে তাকে বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশর্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের জিম্মায় দেয়া হয়। বুধবার বিকেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনা শুনে যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হন। এই ক্ষোভ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে রফিকের সমর্থকরা ঠাকুরপাড়া ও মিয়াপাড়া গ্রামে হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রফিকের সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এ হামলা চালায়। একটি দল সড়ক দিয়ে এবং অন্য দল মাঠের মধ্য দিয়ে গ্রাম দুটি ঘেরাও করে আলমগীরের সমর্থকদের নির্বিচারে কুপিয়ে জখম করে।
এ সময় সিরাজুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার বুকে কোপ ছিল। আরও দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিরাজ হত্যার বিষয়টি জানাজানি হলে রফিকের সমর্থকরা পিছু হটে। তখন তাদের অন্তত ৩০-৩৫টি বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় আলমগীরের সমর্থকরা।
এর আগে আলমগীরের সমর্থকদের বেশ কয়েকটি ঘর ভাঙচুর করা হয়। লুটপাট করা হয় আসবাবপত্র।
হারুন শিকদার, শাহিন শিকদার, আব্দুর রব কাজী, নজরুল কাজী, জুয়েল কাজী, খোকন কাজী, রোকন কাজী, শহিদ খন্দকার, ওয়াহিদ কাজী, বকুল মোল্লা, মিরান মোল্লার বাড়িসহ দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।
এ সময় অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। বাকিদের বোয়ালমারী ও পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
ভাঙচুরের বিষয়ে সুমিনুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষটি শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হয়েছিল। কারণ একটি গ্রুপ হঠাৎ এসে অপর গ্রুপের বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট শুরু করে। পুলিশ এলেই ভাঙচুরকারীরা পালিয়ে যায়।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘যদুনন্দীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা, সমাবেশ ও দেশীয় অস্ত্র জমা নেয়া হয়েছে। তার পরও ওই এলাকাকে শান্ত করা যাচ্ছে না। আসামি গ্রেপ্তারের পর দ্রুত জামিন পেয়ে তারা আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।’