রাজধানীর পান্থপথ সিগন্যাল। স্বাভাবিক সময়ে বেশ কয়েক মিনিট থামতে হলেও ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে এখানে থামতেই হলো না চালকদের। রাজধানীর ব্যস্ততম সিগন্যালগুলো অনায়াসেই পেরিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।
যানজট তো দূরে থাক, গণপরিবহনগুলোকে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ঢাকার ফার্মগেট, আসাদগেট, কারওয়ান বাজার, শ্যামলীসহ বেশ কয়েকটি জায়গার শপিং মল বন্ধ। নিউ মার্কেট এলাকার কিছু দোকান ঈদের পরের দিন থেকে খুললেও ক্রেতা সমাগম নেই। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস বৃহস্পতিবার কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। মতিঝিল পাড়ার ব্যাংকগুলোতেও চাপ ছিল না টাকা তোলার। ঈদ অবকাশের আমেজেই ছিল ব্যাংকগুলো। ঢাকার আদালতপাড়া অনেকটা শূন্য ছিল বলা যায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এখনও বন্ধ।
রাজধানীর কল্যাণপুর টার্মিনালে যাত্রীর তেমন উপস্থিতি নেই। জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি ফেরা অল্প কিছু যাত্রী নামছেন ছুটি শেষ করে। তবে কমলাপুরে রেলস্টেশন শহরমুখী যাত্রীদের পদচারণে সরব ছিল।
নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল।
ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস বৃহস্পতিবার অনেকটা ফাঁকাই ছিল যানজটের নগরী ঢাকা। ঈদের ছুটি শেষে একটি বৃহস্পতিবারের কর্মদিবসের পরেই শুক্র আর শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে অনেকে বৃহস্পতিবার দিনটিও ছুটি নিয়ে টানা ৯ দিনের ছুটি ভোগ করছেন। ফলে প্রথম কর্মদিবসে স্বরূপে ফেরেনি ঢাকা।
গ্রিন রোড পান্থপথ রওশন টাওয়ারের নিচে ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা ওসমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ আওয়া শুরু করছে। শনিবারে বোঝা যাইব। বিক্রি অনেক কম, চার ভাগের এক ভাগে নেমে আসছে।’
ঈদের পর ফাঁকা ঢাকার সড়ক। ছবি: নিউজবাংলা
নতুন বাজার থেকে বাথুলীগামী রইছ পরিবহনে চালকের সহকারী মো. রমজান আলীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘যাত্রী নাই বললেই চলে। এখনও ঢাকায় মানুষ আহে নাই। জমার টাকা উঠাইতে কষ্ট।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ এক যাত্রী বলে উঠলেন, ‘মানুষ তো আইব শনিবার। শুক্রবার থাইকা চাপ শুরু হইব।’
রিকশায় তেমন যাত্রী তুলতে পারেননি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জমির উদ্দিন। নিউজবাংলাকে এ রিকশাচালক বলেন,‘অল্প অল্প করে মানুষ আসা শুরু করছে। সব সময়ে যেমন থাকে তেমন নাই।’
হাজারীবাগ থেকে পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে শিশুমেলা ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে ঘুরতে এসেছেন ট্যানারি শ্রমিক মো. রমজান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে চার বছর পর মেয়ের আনন্দের জন্য ঘুরতে বাইর হইছি। ভালাই লাগতেছে।’
ব্যাংকার ফিরোজ হোসেন জরুরি প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট যাচ্ছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন,‘ঈদের ছুটিতে যাই নাই। আজকে অফিস করে জরুরি কাজে বাড়ি যাচ্ছি। শুক্র, শনি তো বন্ধ। তাই বাড়িতে যাচ্ছি। ’
কল্যাণপুরের উত্তরাঞ্চলগামী এস আই ট্রাভেলসের কাউন্টার স্টাফ সুরুজ আলী নিউজবাংলাকে বলেন,‘দেখেন না কোনো লোক নাই। ট্রিপে ১০-১৫ জন যাত্রী যায়। একদিকের ব্যবসা শেষ। শনিবারের দিকে চাপ বাড়বে।’
ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি সচিবালয়ে। মন্ত্রণালয়গুলোর বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়েছেন। ফলে ঈদে প্রায় ৯ দিনের ছুটি কাটাচ্ছেন তারা। সচিবালয়ে স্বাভাবিক দিনে যেমন দর্শনার্থীর চাপ দেখা যায়, সে চাপও ছিল না বৃহস্পতিবার।
চার দিন ছুটির পর দেশের সব ব্যাংক খুলেছে বৃহস্পতিবার, তবে শাখাগুলোতে গ্রাহকের চাপ নেই বললেই চলে। অনেকটা ঢিমেতালে চলেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম।
যারা অফিস করেছেন তারা ব্যস্ত ছিলেন সহকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে। ব্যাংকের শাখাগুলোতে অলস সময় পার করেছেন অনেকে। কয়েক দিনের মতো গ্রাহকের লম্বা লাইন নেই। শাখার ভেতরে এক বা দুজন গ্রাহক। নগদ টাকা তোলারও চাপ নেই। মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গ্রাহক থাকলেও তা খুবই কম।
আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের ভিড় দেখা না গেলেও প্রধান প্রধান এজলাসে কিছু লোকজন দেখা গেছে। তাদের মধ্যে আইনজীবী আর বারান্দায় অল্প কয়েকজন বিচারপ্রার্থীর সমাবেশ দেখা গেছে। বিভিন্ন আদালতের এজলাসে জ্যেষ্ঠ বিচারকদের শুনানি নিতে দেখা গেলেও অনেক এজলাস বিচারকশূন্য দেখা গেছে। অনেক বিচারক ছুটি নিয়েছেন।