টানা তিন মাস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর এবার কমল তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম। ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০৪ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৩৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
একই সঙ্গে কমানো হয়েছে পরিবহনে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের দামও; যা অটোগ্যাস নামে প্রচলিত। অটোগ্যাস লিটারপ্রতি ৬২ দশমিক ২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।
নতুন দর সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন- কমিশনের সদস্য মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, কামরুজ্জামান ও সচিব খলিলুর রহমান খান।
যুদ্ধের প্রভাব পড়ায় এপ্রিলে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ১ হাজার ৪৩৯ টাকায় বেচাকেনা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সব ধরনের জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। এলপি গ্যাসের দর সাম্প্রতিক বছরগুলোর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সালের পর আর কখনও এতো বেশি দরে বেচাকেনা হয়নি বাংলাদেশে রান্নার কাজে বহুল ব্যবহৃত জ্বালানি পণ্যটি।
বিইআরসি জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে সৌদি আরবের কোম্পানি আরামকোর যথাক্রমে প্রতি টন প্রপেন ৯৪০ ও বিউটেন ৯৬০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসে দাম কমে এটি যথাক্রমে ৮৫০ ও ৮৬০ ডলারে নেমে এসেছে।
অন্য পণ্যের দাম বাড়ন্ত থাকলেও এলপিজি টন প্রতি প্রায় ১শ ডলার কমে গেছে।
এর আগে এপ্রিল মাসে প্রতি ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৩৯০ টাকা দশমিক ৫৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৩৯ টাকা, মার্চ মাসে ১ হাজার ২৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৯০ টাকা দশমিক ৫৬ পয়সা করা হয়।
তার আগের মাসেও দাম বাড়ানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ১৭৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২৪০ টাকা করা হয়।
বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত (রেটিকুলেটেড) এলপিজির দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি ১০৮ টাকা ০২ পয়সা, যা আগের মাসে ১১৬ টাকা ৭০ পয়সা ছিল।
ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের দাম আগের মাসের ৬৭ টাকা ০২ পয়সা থেকে কমিয়ে ৬২ টাকা ২১ পয়সা করা হয়েছে।
টানা পাঁচ মাস মূল্যবৃদ্ধির পর গত ডিসেম্বরে দেশে এলপিজির দাম কমতে শুরু করেছিল। জানুয়ারিতেও প্রতি কেজিতে দাম ৪ শতাংশ কমে ৯৮ টাকা ১৭ পয়সায় নেমেছিল।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে তা ৫ শতাংশ বেড়ে গিয়ে ১০৩ টাকা ৩৪ পয়সা হয়। মার্চ মাসে ১২ শতাংশ বেড়ে হয় ১১৫ টাকা ৮৮ পয়সা। সবশেষ গত এপ্রিলে দাম বেড়েছিল ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ বেশি দাম চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ দিন অথবা আমাদের জানান।’
গত বছরের ১২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন। ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল, আমদানিনির্ভর এই জ্বালানির সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে ভিত্তি মূল্য ধরা হবে। সৌদির দর উঠানামা করলে ভিত্তিমূল্য উঠানামা করবে। অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। ঘোষণার পর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।