রাজধানীর নিউ মার্কেটের ফাস্টফুডের দোকান ওয়েলকামের দুই কর্মচারী বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ বাধিয়েছেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
বাহিনীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওয়েলকামের দুই কর্মচারী মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব ও মেহেদী হাসান বাপ্পি ঘটনার পরই পালিয়ে যান। তারা কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল এলাকার হোটেলগুলোতে চাকরি নেয়ার চেষ্টা করছিলেন।
বুধবার রাতে সেখান থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, পরিচয় আড়াল করতে নিজেদের বেশভূষা পাল্টে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে চাকরির চেষ্টা করছিলেন সজীব ও বাপ্পি।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ১৮ এপ্রিল রাত থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে চলমান এই সংঘর্ষে দুজন নিহত (নাহিদ মিয়া ও মো. মোরসালিন) এবং গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
‘এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ মোট পাচঁটি মামলা দায়ের করা হয়।’
ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত ১৮ এপ্রিল বিকেলে ক্যাপিটাল ও ওয়েলকাম নামে দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতার বিক্রয়ের টেবিল বসানো নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে দোকানের (ওয়েলকাম) কর্মচারী সজীব ও বাপ্পি ফোন করে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতকারীকে আসতে বলেন।
‘রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ১০ থেকে ১৫ জন দুষ্কৃতকারী এসে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের দোকান কর্মচারীদের মারধর করে। এ সময় অন্যান্য দোকানের কর্মচারীরা আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা চালান। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়।’
তিনি জানান, পরবর্তী সময়ে মারামারিকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য ও কনটেন্ট ছড়িয়ে ইন্ধন দেয়ায় সংঘর্ষ চরম সহিংসতায় রূপ নেয়। সংঘর্ষে ডেলিভারিম্যান নাহিদ ও দোকান কর্মচারী মোরসালিন নিহত হন।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৩ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী সজীব ও বাপ্পিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদের বরাতে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘বাপ্পি ওয়েলকাম ফাস্টফুডে দুই বছর ধরে কাজ করতেন। বাপ্পি ও সজীব বিভিন্ন সময় নিজেদের হিরোইজম (বাহাদুরি) প্রকাশের জন্য সেখানে গ্রুপিং করতেন। আধিপত্য বিস্তারের জন্য তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা প্রায়ই মার্কেটে আসত এবং তাদের দোকানে আড্ডাবাজি করত। সেই সূত্রে তাদের সঙ্গে বাপ্পি ও সজীবের সখ্য ছিল।
‘ঘটনার দিন টেবিল বসানো নিয়ে বিতণ্ডার ঘটনায় বাপ্পি ও সজীবের ইগোতে লাগে। এরপর পরিচিত দুষ্কৃতকারীদের খবর দিলে তাদের সহযোগিতায় মারামারিতে লিপ্ত হন বাপ্পি ও সজীব।’
র্যাব জানায়, ঘটনার পর বাপ্পি ও সজীব কক্সবাজারে আত্মগোপনে যান। পরিচয় লুকানোর জন্য তারা চুল কেটে ছোট করে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে চাকরির চেষ্টা চালান।