ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিম বাংলা হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানতে পারে।
আর এটি মোকাবিলায় এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে ঈদের পর প্রথম কর্মদিবস বৃহস্পতিবার এসব কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
কয়েক বছর পর পরই ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা লণ্ডভণ্ড হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। এটি কেড়ে নিয়েছিল হাজার মানুষের প্রাণ। সেই ধাক্কা সামলে না উঠতেই ২০০৯ সালে আঘাত হানে আইলা। প্রাণহানিসহ মানুষের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি, মৎস্যসম্পদসহ অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করে উঠতে না উঠতেই ২০২০ সালে আবার আঘাত হানে আম্ফান।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল জানতে পেরেছি ভারত মহাসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি সাইক্লোনিক সিস্টেম ডেভলপ করেছে। যেটা ৯ তারিখের মধ্যে হয়ত লঘুচাপে রূপান্তরিত হবে, যেটাকে আমরা লো প্রেসার বলি। এরপর ধীরে ধীরে এটা সুস্পষ্ট লঘুচাপ বা লো প্রেসারে রূপ নেবে।
‘এরপর ১১ তারিখের দিকে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়ে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। যদি ঘূর্ণিঝড় হয় তাহলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হবে ‘আসানি’। এটার ল্যান্ডফলটা এখন পর্যন্ত ক্যালকুলেশন হয়নি। নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর জানাতে পারব কবে এটা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে।'
তিনি বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ একটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দেশ। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যার জন্য আমরা আজ প্রাথমিক সভা ডেকেছি। এখানে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করেছি। কবে লঘুচাপ, কবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিটা স্টেপে আমাদের প্রস্তুতি কী, কাদের আমরা সংযুক্ত করব, কাদের দায়িত্ব দেব, কাদের নির্দেশনা দেব সেগুলো আমরা আজ ঠিক করেছি। পরে যদি সতর্ক সংকেত দেয়া হয় এবং দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দিলে আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে দিয়ে দেব।
‘আমাদের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করছে, আমাদের যে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) আছে সে অনুযায়ী কখন কি করতে হবে, সেটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি। সবাই আমরা এখন এলার্ট। ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা এবং গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেল্টার সেন্টারগুলো প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের প্রায় ৭ হাজার সেল্টার হাউজ আছে, প্রয়োজনে স্কুল কলেজ এবং অন্যান্য ভবন কাজে লাগাবে। আম্ফানের সময় ১৪ হাজারের বেশি সেল্টার সেন্টার প্রস্তুত করেছিলাম। সেখানে প্রায় ২৪ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিতে পেরেছিলাম, আমাদের সেই ক্যাপাসিটি আছে এবং প্রস্তুতি আছে। আশা করি আমরা সুন্দরভাবে এটি মোকাবিলা করতে পারব।’