বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গুলি ছুড়েও হয়নি শেষ রক্ষা

  •    
  • ৫ মে, ২০২২ ০৯:৫৯

প্রত্যক্ষদর্শী বাদল বলেন, ‘রাত ১২টার পর বাজারে আমারটাসহ ৩টি দোকান খোলা ছিল। মোটরসাইকেলে করে ওদের আসতে দেখে আব্দুর রাজ্জাক পালানোর চেষ্টা করেন। যখন তারা দা দিয়ে হামলা শুরু করে, তখন ভয় দেখানোর জন্য পিস্তল দিয়ে গুলি করতে থাকেন রাজ্জাক।’

বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া মহিষাবাথান গ্রামে দুই দিন ধরে থমথমে অবস্থা। বাজারের তিন মাথার মোড়ে রাস্তায় রক্তের ছাপ। ইট দিয়ে তা ঘেরাও করে রাখা। পাশে টহল দিচ্ছেন কয়েকজন গ্রাম পুলিশ।

প্রতিদিনের মতো মহিষাবাথান গ্রামের এই বাজারেই ঈদের রাতে আড্ডায় বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক সরকার। সে সময় মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়া কয়েক ব্যক্তি তার ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষায় রাজ্জাক নিজের সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করে গুলিও করেন। পরে দুর্বৃত্তরা তাকে প্রকাশ্যেই কুপিয়ে হত্যা করে।

মঙ্গলবার রাতে রাজ্জাক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এই বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী মহিষাবাথান নতুন বাজারের দোকানদার বাদল সরকার। তার দোকানেই বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তার বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায় বাজারের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও।

বাদল বলেন, ‘রাত ১২টার পর বাজারে আমারটাসহ ৩টি দোকান খোলা ছিল। মোটসাইকেলে করে ওদের আসতে দেখে আব্দুর রাজ্জাক পালানোর চেষ্টা করেন। যখন তারা দা দিয়ে হামলা শুরু করে, তখন ভয় দেখানোর জন্য পিস্তল দিয়ে গুলি করতে থাকেন রাজ্জাক। গোলাগুলি শুনে আমরা পালিয়ে যাই।’

মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে হামলা চালানো হয়। এর প্রায় আধাঘণ্টা পর তিনি মারা যান। হামলার এই ঘটনাটি বগুড়া সদর থানা পুলিশ এবং নিহতের ছোট ছেলে জুনায়েদ ইবনে রাজ্জাক শোভন জানিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, বহু বছরের জমির বিরোধের জেরে এই হামলা চালিয়েছেন রাজ্জাকের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ওমর খৈয়ম রুপন ও তার লোকজন।

সদর থানার ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হক নিউজবাংলাকে জানান, হত্যার ঘটনার পর সে রাতেই পিস্তলসহ আটক করা হয়েছে রুপন ও তার ৫ সহযোগীকে।

ওসি আরও জানান, আটক ৫ জন রাজ্জাক হত্যায় সরাসরি জড়িত। রাজ্জাককে কুপিয়ে হত্যার পর প্রাইভেট কারে চড়ে তারা শহরে যান। এ সময় দত্তবাড়ী মোড়ে সদর থানা পুলিশের একটি টহল দল গাড়িটির বেপরোয়া গতি দেখে থামিয়ে দেয়। সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে পেয়ে হাসপাতালে নেয়। সে সময় গাড়িতে থাকা রুপনের কাছে একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া যায়।

আটক সবার নামে পরে অস্ত্র আইনে মামলা দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওসি।

গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তিরা হলেন মো. সীমান্ত, লিমন শেখ, হিফযুল বারী হক জনি ও আল আমিন। এর মধ্যে জনি ও আমিন গুলিবিদ্ধ হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন।

৪৫ বছরের রুপন থাকেন বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকায়। তিনি আব্দুর রাজ্জাকের চাচাতো ভাই খোকন সরকারের ছেলে। উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্যও তিনি।

গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ২৭ বছর বয়সী জনির বাড়ি সদরের শেখোরকোলা ইউনিয়নের তেলিহারা দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তিনি রুপনের প্রাইভেট কারের চালক। গুলিবিদ্ধ ২৫ বছরের আলামিন রুপনের এলাকার পরিচিত। তিনিও রুপনের বাড়িতে থাকেন।

গোলাগুলিতে আব্দুল হান্নান নামে এক পথচারীও গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। হান্নান মহিষবাথান গ্রামের বাসিন্দা ও টাইলস মিস্ত্রি। তিনিও স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি।

নিহতের ছেলে জুনায়েদ ইবনে রাজ্জাক শোভন ও তার স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক ২০০০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে সেখানে থাকেন। ২০১৪ সালের শেষের দিকে দেশে আসেন। বগুড়া সদরে থেকে তিনি খামারের ব্যবসা করতেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন।

শোভন জানান, রুপনের বাবা খোকন সরকারের সঙ্গে আগে থেকেই জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল রাজ্জাকের।

শোভন বলেন, ‘ঈদের রাতে বাবার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা চান রুপন। টাকা এক দিন পর দিতে চেয়েছিলেন বাবা। এর পরই হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

‘প্রথমে বাবার হাতে একজন ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ওই সময় বাবার হাতে থাকা লাইসেন্স করা পিস্তল মাটিতে পড়ে যায়। হামলাকারীরা ওই পিস্তল থেকে গুলি ছোঁড়ে। তখন আব্দুল হান্নান নামে এক পথচারীও গুলিবিদ্ধ হন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শোভন ও রুপনের আরেক চাচা জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনার সত্যতা জানান।

তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি রুপন নিজেই করেছে। ওর অত্যাচারে এই ইউনিয়নের কেউই শান্তিতে থাকতে পারে না। কেউ ভয়ে রুপনের নামও নিবে না।’

সদর থানার ওসি জাহিদুল জানান, রুপনের বিরুদ্ধে আগেও হত্যা, অস্ত্রসহ ৬টি মামলা আছে। তবে রাজ্জাক হত্যার ঘটনায় এখনও কেউ মামলা করতে আসেনি। এখন অস্ত্রসহ আটক করায় রুপন ও বাকি চারজনের নামে অস্ত্র আইনে মামলা করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে দুই দিনের রিমান্ডে পাওয়া গেছে।

ওসি বলেন, ‘হত্যার ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেটি পর্যালোচনা করছি। তাতে দেখা গেছে, ৩ মিনিটে হামলা হয়। রাত ১টার দিকে রাজ্জাক গুলি করতে করতে দৌড়ে এসে তিন মাথার মোড়ে পড়ে যান। সেখানে তাকে কয়েকজন কুপিয়ে জখম করেন।’

‘আব্দুর রাজ্জাক নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে গুলি করেন। ঘটনাস্থলে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়, কিন্তু ওই পিস্তল এখনও উদ্ধার করা যায়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর