রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়েছেন।
র্যাব জানায়, সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত একজন এবং সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী দুজনসহ তিনজনকে শরীয়তপুর ও কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
র্যাবের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার তিনজনের একজন ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী। ইফতারের সময় টেবিল পাতাকে কেন্দ্র করে এই বাপ্পীর সঙ্গে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারী কাওসারের বিতণ্ডা হয়েছিল।
সিসিটিভি ফুটেজে বাপ্পী। ছবি: সংগৃহীত
ওই সূত্রটি আরও জানায়, বাপ্পী তার আরেক সহযোগীর সঙ্গে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের একটি আবাসিক হোটেলে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখান থেকে বুধবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
গ্রেপ্তার সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র। তারা হলেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আব্দুল কাইয়্যুম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের পলাশ মিয়া ও মাহমুদ ইরফান, বাংলা বিভাগের ফয়সাল, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের মো. জুনায়েদ বুগদাদী।
সে সময় সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের শনাক্ত করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সংঘর্ষের সময় অস্ত্র হাতে, হেলমেট পরে ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। নাহিদকে ঘিরে ধরে হামলায় সরাসরি অংশ নেন এই পাঁচ শিক্ষার্থী, তবে ভাইরাল হওয়া আরেকটি ফুটেজে নিস্তেজ নাহিদকে কোপাতে থাকা ওই ব্যক্তিকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
‘ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন বলে প্রচার করা হলেও তার পরিচয় নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। গ্রেপ্তারের পর তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
নিউ মার্কেট এলাকায় গত ১৯ এপ্রিল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত নাহিদ মিয়া পরে হাসপাতালে মারা যান। এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান ছিলেন নাহিদ।
সংঘর্ষের ঘটনায় মোরসালিন নামের এক দোকান কর্মচারীরও মৃত্যু হয়।
নিউ মার্কেটে সংঘর্ষ: সূত্রপাত যেভাবে
ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মীদের নিজেদের বিরোধ থেকে।
১৮ এপ্রিল, সোমবার রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হলেও এর নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল না। একেক সূত্র একেক কারণ বলছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি বা খাবারের দোকানে কম মূল্য পরিশোধ নয়, বরং নিউ মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের নিজেদের বিবাদ থেকে সংঘাতের শুরু।
এ বিবাদে এক পক্ষকে শায়েস্তা করতে অন্য পক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ডেকে আনে। পরবর্তী সময়ে এটিই ব্যবসায়ী বনাম শিক্ষার্থী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
নিউ মার্কেটের কয়েকটি ফাস্টফুড দোকানের মালিক, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।
মার্কেটের ৪ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই ‘ওয়েলকাম’ নামের ফাস্টফুডের দোকান। সামনেই ‘ক্যাপিটাল’ নামের আরেকটি ফাস্টফুড দোকান। দুটি দোকানের মালিক আপন চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউ মার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এই টেবিল পাতা নিয়ে দুই পক্ষের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। মূলত এ বিরোধের সূত্রপাত ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে। বিতণ্ডার একপর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাপ্পী ওই জায়গা থেকে চলে যান।
এরপর রাত ১১টার দিকে বাপ্পীর সমর্থক ১০ থেকে ১২ জন যুবক আসেন নিউ মার্কেটে। এ সময় তারা হাতে রামদা নিয়ে আসেন।
যুবকরা ক্যাপিটাল দোকানটিতে গিয়ে কাওসারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। সেখানে কাওসার সমর্থকরা বাপ্পীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেন।
বাপ্পী সমর্থকরা মার্কেট থেকে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দলকে নিয়ে এসে মার্কেটে হামলা চালান।