করোনাভাইরাস মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় দুই বছর পর প্রাণভরে ঈদ উদযাপন করেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বিধিনিষেধ না থাকায় নির্বিঘ্নে চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ। এতে অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
ঈদের পর দিন বুধবার দেশের ৮ জেলায় ১৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
নিহতের এসব খবর জানিয়েছেন নিউজবাংলার প্রতিনিধিরা।
রংপুর
রংপুরের পাগলাপীর এলাকায় মাহিন্দ্রাকে (থ্রি হুইলার) মাইক্রোবাসের ধাক্কায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে দুই নারী রয়েছেন।
দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রংপুর সদর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আলী বলেন, ‘রংপুর থেকে মাইক্রোবাস তারাগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। অপরদিক থেকে যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রা আসছিল। মহাসড়কের শলেয়াশা বাজার এলাকায় ইউটার্ন নেয়ার সময় এ দুর্ঘটনা হয়। এতে পাঁচজন মারা যান।’
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার খোকসায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় দুই ভাই নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় অটোরিকশার আরও দুই নারী যাত্রী আহত হয়েছেন।
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাইকপাড়ায় বুধবার বেলা পৌনে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানান, ঈদ উপলক্ষে ওই দুই ভাই অটোরিকশায় করে মামাবাড়ি কুমারখালী যাচ্ছিলেন। বেলা পৌনে ২টার দিকে পাইকপাড়ায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী একটি পিকআপ অটোরিকশায় সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফিরোজ ও সামিরুল সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত অন্যদের খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি বলেন, ‘মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পিকআপটি জব্দ করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি বাস উল্টে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় কমলদহ এলাকায় বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানান, স্বাধীন বাংলা নামের একটি বাস চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে যাচ্ছিল। সড়ক ফাঁকা থাকার কারণে বেপরোয়া গতির বাসটি মিরসরাইয়ের বড় কমলদহ এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।
স্থানীয়রা কয়েকজনকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পাঁচজনের বেশি আহত হয়েছেন। তাদের একজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
কক্সবাজার
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার পথে চকরিয়ায় বাস উল্টে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ যাত্রী।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া কলেজের সামনে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে উল্টে যায়।
চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের বাসটি কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চকরিয়া কলেজের সামনের সড়কের বাঁক ঘুরতেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই শারমিন নিহত হন। গুরুতর আহত ১০ যাত্রীকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ত্রিশালে চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে ছিটকে রাস্তায় পড়ে তানিম নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার নুরুর দোকান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তানজিম পরিবহন নামের একটি বাস ময়মনসিংহের দিকে আসছিল। বেলা ১১টার দিকে বাসটি উপজেলার নুরুর দোকান এলাকায় আসামাত্রই চাকা ফেটে বিকট শব্দ হয়। এতে বাসের জানালা দিয়ে শিশু তানিম ছিটকে সড়কে পড়লে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।’
পঞ্চগড়
ঈদের ছুটিতে বাইরে করে ঘুরতে গিয়ে লাশ হলো তিন কিশোর, যারা সম্পর্কে কাজিন।
হেলমেট ছাড়া এই বাইকে তিন কিশোর চড়ার পর বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের মোটরসাইকেলটি সড়কের পাশে গাছে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সবাই।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, তিন বন্ধু মহারাজার দিঘীতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। মডেলহাট বাজার থেকে মজারাজা দিঘীতে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এতে তারা পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে৷ পরে স্থানীয়রা তাদের দ্রুত উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
যশোর
মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন।
যশোরের চৌগাছার ইলিশমারী ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মদদুইনপুর এলাতার মাঝামাঝি জায়গায় বুধবার বিকেল ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত তরুণরা হলেন শাহিনুর রহমান ও সাগর হোসেন। তাদের বয়স যথাক্রমে ২২ ও ১৮ বছর।
স্থানীয়রা জানান, তারা অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।
উপজেলার নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান বলেন, ‘শাহিনুর ও সাগর চৌগাছা-বিদ্যাধরপুর সড়ক ধরে মোটরসাইকেলে হাজরাখানা গ্রাম থেকে মহেশপুরের বিদ্যাধরপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে চৌগাছার ইলিশমারী ঈদগাহপাড়া ও মহেশপুরের মদনপুর মোড়ে বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা দিলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক উত্তম কুমার বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘মরদেহ দুটি উদ্ধার করে সুরাহতল প্রতিবেদন করা করেছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
মাদারীপুর
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি এলাকায় বাসের চাপায় একটি বিদ্যুৎচালিত ভ্যানের চালকসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী ‘আমানত শাহ’ বাস খাদে পড়ে আহত হন আরও অন্তত ৬ জন।
বুধবার রাত ৮টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজৈর থানার ওসি আলগমীর হোসেন।
নিহতরা হলেন, রাজৈর উপজেলার নড়ারকান্দি গ্রামের ৩৫ বছরের আমির শেখ, দুর্গাবর্দি গ্রামের ২৩ বছরের শান্ত তপাদার ও আমগ্রাম ইউনিয়নের তেলিকান্দি গ্রামের ভ্যানচালক ৪০ বছর বয়সী নূরনবী।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, রাত ৮টার দিকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী আমান শাহ বাসের সঙ্গে ভ্যানটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক নূরনবী মারা যান। আর ভ্যানের যাত্রীদের মধ্যে শান্ত তপাদার ও আমির শেখকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর মারা যান।
এ সময় যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ওই বাসেরও ৬ যাত্রী আহত হন। তাদেরকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ওসি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুদ্ধরা বাসের গ্লাস ভাঙচুর করেছে।