ন্যাশনাল পলিমার কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দিতে হবে তাকে। তাই স্বজনদের সঙ্গে ঈদের দিন কাটিয়েই রাজধানীতে ফিরেছেন তিনি।
রাজশাহী কমিউটারে করে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান সিরাজগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাক। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ঈদের আগের দিন অনেক ভোগান্তি সহ্য করে বাড়ি ফিরেছিলেন। এক দিন কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে যোগ দিতে ফিরেছেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঈদের আগের দিনের টিকিট পেয়েছিলাম, কিন্তু ভুল হয়েছিল যে এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠেছিলাম। কী যে ভোগান্তি হয়েছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। পা ফেলার জায়গা ছিল না; নিজের সিট পেতে বেশ ধকল গেছে।
‘মানুষের নিঃশ্বাসের গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তারপরও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব বলেই গিয়েছিলাম।’
এক দিন পরই ফেরার আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘কী করব ভাই! বেসরকারি চাকরি, জবাবদিহি বেশি। তাই কালকেই কাজে ফিরতে হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাসুদকেও বৃহস্পতিবার অফিস করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এই কর্মচারী বলেন, ‘কাল অফিস খুলবে। যদিও তার পরেই আবার দুই দিন ছুটি পাব, কিন্তু এই এক দিন অফিস করার জন্যই স্বজনদের ছেড়ে ঢাকায় আসতে হলো।
‘ঈদের আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারলাম না। আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া হলো না।’
পবিত্র ঈদুল ফিতরে ছয় দিনের ছুটি শেষে সরকারি অফিস খুলছে বৃহস্পতিবার। গত ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ছুটি শেষ হচ্ছে ৪ মে।
৩ মে দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়েছে। তাই ঈদের এক দিন পরই ফিরতে হচ্ছে চাকরিজীবীদের।
গত ২৯ ও ৩০ এপ্রিল ছিল সপ্তাহিক ছুটি। এরপর ১ মে ছিল মে দিবসের ছুটি। ২, ৩ ও ৪ মে ঈদের ছুটি কাটান সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার এক দিন খোলা থাকার পর আবার দুই দিন (৬ ও ৭ মে) সাপ্তাহিক ছুটি। তাই যারা ৫ মে ছুটি নিয়েছেন, তারা টানা ৯ দিনের ছুটি পেয়েছেন।
ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই ৫ মে ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা আগামী ৮ মে অফিস করবেন।
যারা ছুটি না পেয়েও অনেক দূরে গিয়ে ঈদ করেছেন তাদের এবং বেসরকারি চাকরিজীবী ও অন্য পেশাজীবীদের অনেককেই বৃহস্পতিবার অফিসে যোগ দিতে ফিরতে হচ্ছে ঢাকায়।
কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবারে কর্মস্থলে যোগ দিতে ফিরছেন অনেকেই। আবার ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন, তবে উভয় ক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যাটা অনেক কম।
নোয়াখালী এক্সপ্রেসে করে ঢাকা ফেরেন তানজিদ করিম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিবারের সঙ্গে ঈদের দিন কাটিয়েই ফেরেন তিনি। তানজিদ করিম বলেন, ‘কাল অফিসে যোগ দেয়ার জন্যই ফিরছি।’
একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হাসান। থাকেন বাসাবোতে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মায়ের সাথে ঈদ করতে গিয়েছিলাম। অফিসে যোগ দেয়ার জন্য আজকেই ফিরতে হলো।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ পরিচয় দেয়া আব্দুল আজিজ জানান, সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী কমিউটারে করে ঢাকা ফিরেছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত যাবেন দক্ষিণ বনশ্রী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে উপকূল এক্সপ্রেসে কমলাপুর স্টেশনে আসেন তিনি।
এদিকে যারা বাড়ি যাচ্ছেন তারা জানান, ঈদের আগে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। সড়কপথে ভোগান্তি হবে বলে যাননি বাসে। ঢাকায় ঈদের দিন কাটিয়ে আজ বাড়ি ফিরছেন তারা।
এ ছাড়া অনেকেই বাড়ি থেকে এসে ঢাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছেন। ঈদের দিন পর্যন্ত ভালো ব্যবসা করে আজ তারাও বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জগামী মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফুটপাতে পোশাক বেচি। ঈদের আগের দিন মাঝরাইত পর্যন্ত ব্যবসা করছি।
‘পরিবারের সাথে ঈদ না করায় কষ্ট অয়। তাই আজকে যাইতেছি। কয়েক দিন পরে ফিরবাম (ফিরব)।’