চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা জাকির হোসেন সড়ক। দুই লেনের প্রশস্ত এ সড়কের ওয়্যারলেস মোড়ের কাছে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল।
চিকিৎসা নিতে মাসে দুইবার সে হাসপাতালে আসতে হয় ৫৮ বছর বয়সী ইশতিয়াক আলীর। সবশেষ গত ২৮ এপ্রিল চেকআপ শেষে হাসপাতালের সামনের এ সড়ক পার হতে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন মিনিট দশেক।
গাড়ির গতি ও চাপের কারণে সড়ক পার হতে পারছিলেন না ইশতিয়াক। যদিও তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে, তার ঠিক পাশেই ছিল চলন্ত সিঁড়িওয়ালা ফুটওভার ব্রিজ।
চট্টগ্রাম শহরে এমন চলন্ত সিঁড়ি এটিই প্রথম ও একমাত্র, কিন্তু সে সিঁড়ি নিশ্চল।
ওঠার মুখেই গ্রিল দিয়ে আবদ্ধ সিঁড়িটি। তাই চাইলেই এতে চড়ে সিটি করপোরেশন নির্মিত ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে পারেন না ইশতিয়াকের মতো অসংখ্য রোগী ও পথচারী। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে হয় তাদের।
সে আক্ষেপ থেকে ইশতিয়াক আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনগণের টাকায় এ ব্রিজ নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। অথচ জনগণই এটি এখন ব্যবহার করতে পারছে না।
‘বয়স্ক মানুষ ছাড়াও শিশু ও নারীদের হাতে জান নিয়ে হেঁটে সড়ক পার হতে হয়। চলন্ত সিঁড়ি চালু না করুক, অন্তত তালাটা খুলে দিলে মানুষ সিঁড়ি বেয়ে অপর পাশে পারাপার হতে পারত।’
২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঘটা করে ফুটওভার ব্রিজটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরী। ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৯ ফুট প্রস্থের এই ফুটওভার ব্রিজে ওঠার জন্য বসানো হয়েছে দুটি এস্কেলেটর। অন্যদিকে নামার জন্য আছে সাধারণ সিঁড়ি।
চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হলেও উদ্বোধনের দুই মাস পরই করোনার অজুহাতে বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় থেকেই সিঁড়ির মুখে তালা লাগিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
উদ্বোধনের আগে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, জাপানের ফুজি কোম্পানি থেকে কেনা এই আউটডোর এস্কেলেটরটি বৃষ্টিতে ভিজলেও নষ্ট হবে না। যদিও ছাউনি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া দাবি করা হয় এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। পথচারী পারাপার না করলে এটি নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।
নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা কথা ছিল। পরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল, তবে এসবের কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি গত দুই বছরে।
কী বলছে চসিক
চসিক বলছে, চলন্ত সিঁড়ির কারণে লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। এর জন্য চসিকের আর্থিক বরাদ্দ নেই।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম (যিনি ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণের সময় ছিলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলন্ত সিঁড়ি চাইলেও চালু করতে পারছি না। কারণ এটি চালু করলে মাসে লাখ টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে। আমরা চিন্তা করছি এস্কেলেটর খুলে ফেলে সাধারণ সিঁড়ি যুক্ত করে দেব।’
এস্কেলেটরটির ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি চসিকের প্রধান প্রকৌশলী।
চসিক প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নগরে ফুটওভার ব্রিজ সাতটি। এর মধ্যে নিউ মার্কেট এলাকার দুটিসহ তিনটি ফুটওভার ব্রিজই অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
অব্যবহৃত এসব ফুটওভার ব্রিজ মাদকসেবী ও বখাটেদের দখলে।
এদিকে ব্যবহার উপযোগী থাকলেও বন্দরে নতুন মার্কেটের সামনের ফুটওভার ব্রিজটি সড়ক উঁচু করায় ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কারণে ভেঙে ফেলা হয়েছে ইপিজেড ও কাস্টমস মোড়ের ফুটওভার ব্রিজ দুটি।
‘অর্থের অপচয়’
পরিকল্পনাহীন প্রকল্পে জনগণের অর্থের অপচয় হয় উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্প প্রণয়নের আগে কি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সম্ভাব্যতা যাচাই করেনি যে বিদ্যুৎ খরচ আসবে? এগুলো শুভংকরের ফাঁকি।
‘যেখানে নগরে দিনের বেলায়ও সড়কবাতি জ্বলে, সেখানে জনগণের জন্য চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ চালাতে বিদ্যুৎ বিলের অজুহাত দেয়া হাস্যকর।’