বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কল্যাণপুর খালে নৌকা চলবে কীভাবে

  •    
  • ৪ মে, ২০২২ ১০:০৪

উদ্ধার করা কল্যাণপুর খালে যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল শুরুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু খালের এক জায়গায় বাঁধাই করা পাড়ের কারণে খালের প্রশস্ততা আট ফুটে নেমে এসেছে। এই খালে নৌকা চলবে কীভাবে, দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতালের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কল্যাণপুর খালের একটি শাখা। এতদিন বেদখল থাকলেও সম্প্রতি তা অবমুক্ত হয়েছে উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের তৎপরতায়।

এই খালকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ ও এর ব্যবহার বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। যার মধ্যে থাকবে সৌন্দর্যবর্ধন, দুই পাড় স্থায়ীভাবে বাঁধাই, সাধারণের জন্য ওয়াকওয়ে, ছোট ছোট নৌকার মাধ্যমে যাত্রী বহন ইত্যাদি।

ওদিকে ওই একই এলাকায় শ্যামলী-আগারগাঁও সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এতে বাড়ানো হচ্ছে খালের ওপর কালভার্টের অংশ। পুরোনো কালভার্টের আদলেই চলছে এ সম্প্রসারণ কাজ। পুরোনো কালভার্টের প্রশস্ততা কম হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, এই খালে নৌকা চলবে কীভাবে।

এই প্রকল্প নিয়েও সাধারণের মাঝে চলছে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, খাল ধ্বংস করে বানানো হচ্ছে ড্রেন।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রকল্প ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

ড্রেন নয়, হচ্ছে কালভার্ট সম্প্রসারণ

রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। যানজট নিরসনে শ্যামলী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এই সড়কটি উন্নীত করা হচ্ছে ছয় লেনে। এ জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে জমি আর সেখানে চলছে সড়ক নির্মাণের কাজ।

এই সড়কটিকে পঙ্গু হাসপাতালের পাশ দিয়ে আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করেছে কল্যাণপুর খালের একটি শাখা। হাসপাতালের সামনে একটি কালভার্টের মাধ্যমে খালের পানিপ্রবাহ ঠিক রেখে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এখন এটি ছয় লেন করতে গিয়ে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে সেই কালভার্টটিকেও।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগের কালভার্টের সঙ্গে মিল রেখেই সেটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে খালের ভেতরে সম্প্রসারিত কালভার্টের অংশে আলাদাভাবে পানি নামার জন্য আলাদা একটি ড্রেন করা হচ্ছে। এতে দেখলে মনে হয় খালটিকে সংকীর্ণ করে এই ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে।

বিস্তারিত জানতে নিউজবাংলা কথা বলে প্রকল্পটির পরিচালক ও উত্তর সিটির অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদের সঙ্গে। তিনি জানান, এখানে খাল সংকীর্ণ করে ড্রেনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। কারিগরি কিছু জটিলতার কারণে আলাদা একটি ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এতে খালের জায়গা নষ্ট হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘এই খালে আশপাশের সব স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানি এসে পড়ে। একইভাবে গণভবনের একটি বড় স্যুয়ারেজ লাইন পড়েছে এই কালভার্ট সম্প্রসারণ এলাকায়। এখন যদি ওই স্যুয়ারেজের মুখ রেখে কালভার্টের সম্প্রসারণ দেয়ালে মিলিয়ে দেয়া হয়, তাহলে কালভার্টটি দুর্বল হয়ে যাবে। ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল করলে কালভার্ট যেকোনো সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

‘আবার কালভার্টের দেয়াল আর স্যুয়ারেজ লাইন মুখোমুখি থাকলে লাইনের পানির স্রোত এসে একইভাবে কালভার্টের দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এই সংকট এড়াতে স্যুয়ারেজ লাইনটাকে আলাদা একটা ড্রেনের মাধ্যমে খালের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর ড্রেনটা হবে শুধু যেটুকু জায়গা পর্যন্ত কালভার্ট সম্প্রসারণ হচ্ছে, ততটুকুই।

‘তাই এখানে খালের জায়গা নষ্ট হওয়ার কিছু নেই। তা ছাড়া এই কালভার্ট সম্প্রসারণের জন্য যে জলাবদ্ধতা হবে, এই সুযোগও নেই। কারণ, আমরা আগের চেয়ে কালভার্টের নতুন মুখটি আরও দুই ফুট চওড়া করেছি। আগের কালভার্টের মুখ ছিল ৮ ফুট, নতুন মুখ হচ্ছে ১০ ফুট।’

আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতালের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কল্যাণপুর খালের শাখা। ছবি: নিউজবাংলা

নৌকা চালানোর পরিকল্পনা

কল্যাণপুর খালের এই শাখাটি অবৈধ দখলে চলে গেলেও সম্প্রতি তা অবমুক্ত করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। খালের দখল স্থায়ীভাবে রুখতে খালের চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ, খালে নৌযান পরিচালনার মাধ্যমে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলেছিলেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু এই আট ফুট প্রশস্ত কালভার্টের মুখ দিয়ে স্বাভাবিক নৌযান চলাচল কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রকল্প পরিচালক ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ বলেন, ‘এই কালভার্ট ভেঙে নতুন করে করতে গেলে এই সড়কের যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে, যা সাধারণের ভোগান্তির কারণ হবে। খালকে কেন্দ্র করে আলাদা পরিকল্পনা আছে। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন কালভার্ট করা হবে।’

এই প্রকল্পের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের কার্যপ্রণালি নিয়ে আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না। আগের কালভার্টের মুখ ছিল ছোট, সেটাকে যেটুকু বাড়ানো সম্ভব ততটুকু বাড়িয়ে নতুন মুখ করা হচ্ছে। আট ফুট চওড়া জায়গায় ছোট একটি নৌকা পার হতে সমস্যা হওয়ার কথা না। পাশাপাশি হয়তো নৌকা চলবে না।

‘এটা এখন ছয় লেনের কাজের গুরুত্বের কারণে করা হচ্ছে। এই খাল নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে সবকিছু মাথায় রেখেই পরিকল্পনার কাজ চলছে। এই পরিকল্পনায় আমিসহ দেশের সব নগর পরিকল্পনাবিদের সহযোগিতা নিচ্ছেন উত্তর সিটির মেয়র।

‘পরিকল্পনায় রয়েছে খালের দুই পাশজুড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা, যেন মানুষের হাঁটা ও বিনোদনের জায়গা হয়। একই সঙ্গে খাল দখলমুক্তির চিরস্থায়ী একটা ব্যবস্থাও হবে, পুরো খাল এলাকা নান্দনিকভাবে সাজানো হবে, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, এতে কেউ খালে ময়লা ফেলছে কি না সেটাও মনিটর করা যাবে।

‘ছোট ছোট নৌকা চলবে যাতে করে সাধারণ মানুষ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নৌকায় করে যেতে পারে। এই সবকিছু মিলিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনায় কালভার্ট প্রশস্ত ও উঁচু করার বিষয়টিও থাকবে।’

এ বিভাগের আরো খবর