প্রায় এক বছর পর ঈদের দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
গুলশানে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সাত সদস্য।
সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রায় দুই বছর পরে আজকে আমরা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একসঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম।
‘এই সাক্ষাৎ আমরা পূর্বেও করেছি যখন তিনি কারাগারে ছিলেন না, গৃহে অন্তরীণ ছিলেন না। ওই সময় প্রতি বছরই আমরা ঘরের ভেতরে না, ঘরের বাইরে লনে বসে ঈদের দিনে সাক্ষাৎ করতাম; শুভেচ্ছা বিনিময় করতাম।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে এবারের সাক্ষাৎ আনন্দময় ছিল না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘প্রায় বছরখানেক পর আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারলাম, তার কথা শুনতে পারলাম এবং তিনি যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন, এই প্রার্থনার কথা তাকে জানাতে পারলাম। দেশবাসী যে তার জন্য প্রার্থনা করছে, সেই কথাটাও আমরা জানাতে পারলাম।
‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ, আপনারা জানেন। এই অসুস্থতার মধ্যে তিনি পূর্বেও যেমন দেশবাসীর কথা চিন্তা করেছেন সবসময়, আজকে তিনি ঠিক একইভাবে দেশবাসীর ও দেশের মানুষের অবস্থার কথা জানতে চেয়েছেন এবং বর্তমানে যে সামগ্রিক অবস্থা আছে, এই অবস্থার ব্যাপারে অবগত হয়েছেন আমাদের দ্বারা।’
দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা আপনাদের এই কথা জানিয়েছেন যে, ঈদের শুভেচ্ছা তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চান। তার জন্যে দেশবাসীর কাছে দোয়া তিনি চেয়েছেন এবং তিনি দেশবাসীর জন্য দোয়া করেছেন।
‘এ দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে, গণতন্ত্রকে ফিরে পায়, মানুষ তার অধিকার ফিরে পায়, এই প্রার্থনা তিনি করেছেন।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) এখনও সুস্থ নন। ডাক্তাররা আছেন। তারা এই বিষয়ে বলতে পারবেন।
‘এইটুকু আমি বলতে পারি যে, এখনও তিনি অত্যন্ত অসুস্থ আছেন। এখনও হেঁটে খাবার টেবিলে যেতেও তার খুব কষ্ট হয়। এটাই বাস্তবতা। তাহলেই আপনারা বুঝতে পারবেন তিনি কেমন আছেন।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কোনো বার্তা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি একই কথা বলেছেন, দেশের জন্য ভালোবাসা তারা যেন প্রবল করে এবং দেশকে তারা যেন মুক্ত করে।’
বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাত ৮টায় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ঢোকেন। এক ঘণ্টা তারা সেখানে ছিলেন।
সর্বশেষ গত বছরের কোরবানির ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এই নেতারা। গত রোজার ঈদে বিএনপি চেয়ারপারসন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দলের নেতাদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়া হয় বিএনপির প্রধানকে।
এরপর থেকে গুলশানের ওই বাসায় থাকছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত খালেদা জিয়া। সেখানে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক কেউই নেত্রীর সাক্ষাৎ পান না।
এর আগে ঈদের দিন সকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান বোন সেলিনা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। দুপুরে তাদের নিয়ে খাবার খান খালেদা জিয়া।