ঈদের লম্বা ছুটিতে কেউ গ্রামের বাড়িতে গেছেন, কেউ দেশের বাইরে। যারা কুকুর-বিড়াল পোষেন, এ অবকাশে তাদের পোষা প্রাণীগুলো কোথায় থাকছে?
এদের অনেকেরই জায়গা হচ্ছে কুকুর-বিড়ালের জন্য নির্ধারিত ডরমিটরিতে। এগুলোরই একটি ‘ফারিঘর’, যারা দাবি করে, তারা আক্ষরিক অর্থেই পোষা প্রাণীর ‘হোটেল’।
মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যাত্রা শুরু করেছে ফারিঘর। এখানে আগামী ৬ মে চালু হচ্ছে পেট ক্যাফে। বিড়ালপ্রেমীরা তাদের বিড়াল নিয়ে এখানে খেতে আসতে পারবেন বা এখানে থাকা বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।
ঈদের ছুটিতে যারা গ্রামে গেছেন বা দেশের বাইরে গেছেন, তারা তাদের পোষা প্রাণী রেখে গেছেন ফারিঘরে। অনেকে ঢাকার বাইরে গিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের রেখে যাওয়া পোষা প্রাণীর খোঁজখবর নিচ্ছেন। অনেকের আত্মীয়স্বজন এই হোটেলে এসে দেখে যাচ্ছেন তাদের পোষা প্রাণীগুলোকে। এ কারণে রাখা হয়েছে পরিদর্শনের ব্যবস্থা।
এ রকমই একজনকে সোমবার পাওয়া গেল। নাম তপন রায়। ভাই বিদেশে যাওয়ায় কুকুর রেখে গেছেন ফারিঘরে। তপন রায় এসে মাঝে মাঝে দেখে যান ভাইয়ের কুকুর।
তপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কুকুরটা আমার বড় ভাইয়ের। ঈদের ছুটিতে ভাইয়ের পরিবারের সবাই কানাডায় গেছেন বেড়াতে। ১৫ দিনের জন্য কুকুর এখানে রেখে গেছেন। আমি ভাইয়ের বাসায় মাঝে মাঝেই যাই। তাই কুকুরটার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। আমার বাসা যেহেতু মিরপুরে, তাই আমি মাঝে মাঝে এসে ওকে (কুকুর) দেখে যাই।’
‘ফারিঘর’ সম্পর্কে কথা হয় এটির ম্যানেজার তারিন নাজ নীরার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরাই প্রথম ফাইভ স্টার পেট হোটেল করেছি। আমার জানা মতে, এ রকম হোটেল বাংলাদেশে আর নাই। আমাদের মতো প্রপার সিস্টেম, সারা বছরের জন্য এ রকম ব্যবস্থা আর নাই। হোটেলে গেলে যে রকম আলাদা কক্ষ ভাড়া নেয়া যায়, আমরাও আলাদা আলাদা কক্ষে তাদের রাখি।’
এ রকম একটি হোটেল চালুর পেছনের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানব সন্তানকে তো সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু পশুপাখি ওভাবে নিয়ে যাওয়া যায় না বা আমরা নিই না। অনেকে এ রকম জায়গা খোঁজেন, যেখানে তাদের পোষা প্রাণী রেখে যাওয়া যাবে। এই প্রাণীদের কারণে লম্বা ছুটিতে পরিবারের কাউকে না কাউকে বাসায় থেকে যেতে হয়। তাই সবাই যাতে তাদের ছুটি উপভোগ করতে পারেন, সেই চিন্তা থেকে পোষা প্রাণীর হোটেল খোলা।’
ঈদে ‘অতিথি’ কেমন এসেছে, জানতে চাইলে তারিন বলেন, ‘ঈদের আগেও ভালো আসত। ২৬ মার্চের আগে-পরে একটা লম্বা ছুটি পড়েছিল। তখনও আমাদের হাউস ফুল। ঈদে শুধু হাউস ফুল না, এক্সট্রা রুমেরও ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এখনও অনেকে ফোন দিচ্ছেন, কিন্তু জায়গার অভাবে রাখতে পারছি না।’
ধারণাক্ষমতা সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিড়ালের জন্য পার্মানেন্ট ১৪টা কেবিন আছে। কুকুরের জন্য তিনটা রুম আছে। কুকুরের রুমগুলো একটু বড়। একটা কেবিনে একটা পরিবারের সর্বোচ্চ তিনটা বিড়াল রাখা হয়। বিড়ালের যেন কোনো সমস্যা না হয়, এ কারণে আলাদা পরিবারের জন্য আলাদা কেবিন। বিড়ালদের এক-একটা কেবিন পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট।’
তারিন জানান, ফারিঘরে ঈদের চাপ শুরু হয়েছে রোজার শুরু থেকেই। চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সব কক্ষ বুক করা আছে। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে কোনো বিড়াল বা কুকুর হোটেলে জায়গা দিতে পারবেন না তারা।
তারিন বলেন, ‘১৫ রোজার পর থেকে যত ফোন আসছে, সবাইকে স্যরি বলতে হচ্ছে জায়গা না থাকার কারণে। আমরা তো মাত্র শুরু করলাম। আরও জায়গা বাড়ানোর চিন্তা আছে আমাদের। আমরা আগে বুকিং নিই এবং অগ্রিম টাকা নিয়ে থাকি। যার প্রাণী তাকেই আমরা খাবারটা দিতে বলি। আমরা শুধু প্রক্রিয়া করে খাওয়াই। আমরা খাওয়ালে তার জন্য আলাদা টাকা দিতে হবে।’
বিড়ালের জন্য প্রতিদিন ৫০০ টাকা এবং কুকুরের জন্য ১৫০০ টাকা দিতে হয় ফারিঘর হোটেলে। প্যাকেজ আছে পাঁচ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন, ২০ দিন ও ৩০ দিনের। প্যাকেজ নিলে ভাড়া কিছুটা কমে আসে। আবার এক পরিবারের দুই-তিনটি বিড়াল কেবিন শেয়ার করলে সে ক্ষেত্রে ভাড়া কমে আসে।
ম্যানেজার তারিন বলেন, ‘ঈদে ২৬টা বিড়াল রেখেছি আমরা। কুকুর আছে দুইটা। আরও দুইটা কুকুর আজকে চলে আসবে।
‘চলতি মাসে আমরা চালু করছি পেট ক্যাফে। পেট ফ্রেন্ডলি মানুষ এই ক্যাফেতে আসতে পারবেন। ক্যাফে চালু হলে যাদের বিড়াল আছে তারা তাদের বিড়াল নিয়ে এখানে আসতে পারবেন বা এখানের বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।’