বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লাকীদের ভরসা গরুর মাথার মাংস

  •    
  • ২ মে, ২০২২ ২০:১৮

‘গরুর মাংসের দাম তো শবেবরাতেই আগের থেইকাই বেশি নিতাছে। আর মাথার গোশত আগে সাড়ে ৩০০ টাকায় কিনতাম, এহন ৪০০ টাকা নিছে।’

গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা ছুঁয়েছে সেই রোজার শুরুতেই। মাস শেষে ঈদের প্রাক্কালে যেখানে এই দাম, তখন ঈদের আগে আগে কোথাও দাম এর চেয়ে বেশি।

এই দামের মাংস কেনা সম্ভব হয় না একটি বড় অংশের মানুষদের। এদের একজন লাকী আক্তার। কম দামে মাথার মাংসতেই তৃপ্ত থাকতে হয় তাকে। ঈদেও তাই কিনেছেন।

গৃহিণী লাকীর দেখা মিলল মিরপুর-২ নম্বরের মসজিদ মার্কেটের সামনে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ছয় থেকে সাত বছর বয়সী মেয়েকে। সেখানে দোকানে গরুর মাংস বিক্রি হয়। ঈদের আগে জবাই হয়েছে বেশি, দোকানের পাশাপাশি ভাগাতেও বিক্রি হচ্ছিল।

লাকী গৃহিণী। তার স্বামী শ্রমজীবী মানুষ। আয় খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু মেয়েটি ঈদে গরুর গোশতের আবদার করেছে। কিন্তু বাজেটে মেলে না। মাংসের কেজি এমনিতে ৭০০ টাকা, ঈদের আগে আরও বেশি ৫০।

দাম শুনে পরে কম দামের মাথার মাংস নিলেন লাকী। দাম নিল ৪০০ টাকা।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম তো শবেবরাতেই আগের থেইকাই বেশি নিতাছে। আর মাথার গোশত আগে সাড়ে ৩০০ টাকায় কিনতাম, এহন ৪০০ টাকা নিছে।’

এমন সময়ে আরেক নারী ক্রেতা এসে দাম শুনে বললেন, ‘এত দাম কেন?’

বিক্রেতার উত্তর, ‘এত দাম কই? মাত্র সাড়ে ৭০০।’

এই সাড়ে ৭০০ টাকা মাত্র নয় কোটি মানুষের কাছে, যাদের এক দিনের আয়ের চেয়ে কম। এই টাকা দিয়েই সংসার চালাতে হয়, সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে হয়। তাই গরুর মাংস চোখে দেখা হয় না সেভাবে।

এক দশক ধরে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশে অজস্র খামার গড়ে উঠেছে সত্য। কিন্তু এখানে তৃণভূমির অভাবের কারণে গরু লালন-পালনে খরচ বেশি। এসব কারণে মাংসের দাম বেড়ে চলেছে। এতটাই বেড়ে গেছে যে, নিম্ন আয়ের মানুষদের পক্ষে এই মাংসের স্বাদ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

যে ব্রয়লার মুরগিতে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাত মানুষ, সেই মাংসের দামও ঈদের আগে আগে কোথাও কোথাও কেজি ছুঁয়েছে ২০০। আর পাকিস্তানি বলে পরিচিতি পাওয়া সোনালি মুরগির দাম ৩০০-র বেশি, পাড়া-মহল্লায় তা সাড়ে ৩০০। নাড়িভুঁড়ি বের করার পর কেজি পড়ে ৫০০ টাকা।

কিন্তু মুসলিমপ্রধান দেশে বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদে ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে চেয়ে হলেও মাংসের আয়োজন করতে হয়। তাই ঈদের আগের দিন আগে সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় ছিল মাংসের দোকানে। আর এই ভিড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় গরুর মাংস, যে মাংসের প্রতিই ঝোঁক বেশি।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লাকীর মতো মানুষরা অর্ধেক দামে মাথার মাংস কিনছেন।

সকালে রাজধানীর নাখালপাড়া, নাবিস্কো, কারওয়ান বাজার ও মিরপুরে বেশ কিছু মাংসের দোকানে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। নাখালপাড়ায় গরুর মাংস ৭০০ ও খাসির মাংস ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারেও একই দামে বিক্রি করছে বিক্রেতারা।

কোথাও কোথাও ক্রেতাদের দামাদামিতে বেশ কিছু বিক্রেতাকে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

অন্যদিকে বিকেলে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় মিরপুর এলাকায়। মিরপুর-২-এ মসজিদ মার্কেট এলাকায় দেখা যায় ১০০ টাকা বেশি দরে ৭৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

বন্ধু গোস্ত বিতানের মালিক রমজান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি।’

শহরের অন্য এলাকার তুলনায় এখানে দাম বেশি কেন- জানতে চাইলে তিনি উল্টো বলেন, ‘বাজারে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। গত বছরের চেয়ে বেচাকেনা কম। গত বছর করোনার এই সময়ে ১০-১২ ডা গরু বেচছি। এইবার বেচা ছয়ডা। দাম বেশি গরুর।’

তিন দিন আগেও যে ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়।

সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা। গত সপ্তাহেও যে মুরগি ২৯০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে, তা এখন ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর