ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজপথে গাড়ির বাড়তি গতি উচ্ছ্বসিত মানুষদের জন্য বিপদও ডেকে আনছে। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দুর্ঘটনা ঘটছে এখানে-সেখানে।
মঙ্গলবার ঈদ হলেও এবার ছুটি এসেছে আগেভাগে। রোববার মহান মে দিবসের ছুটির আগের দুই দিন সাপ্তাহিক বন্ধ। এরপর তিন দিনের ঈদের ছুটির পর আর একটি দিন কোনো রকমে ছুটি নিতে পারলে টানা ৯ দিনের অবসর- এই অবস্থায় মানুষের রাজধানী ছাড়ার সংখ্যাও এবার বেশি।
গত দুই বছর করোনার কারণে যারা স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারেননি, তারা এবার ফিরেছেন প্রিয়জনের কাছে। এ কারণে ফাঁকা হয়ে পড়েছে। সড়কগুলোয় গতির ঝড় তুলছে গাড়িগুলো।
প্রধান সড়কগুলোয় ব্যারিকেড দিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পুলিশ। কিন্তু আবাসিক এলাকাসহ ছোট ছোট সড়কে এমন বাধা নেই।
রোববার রাতে দক্ষিণ বনশ্রী দশতলা মার্কেটের (ইস্টার্ন বনবিথী শপিং কমপ্লেক্স) সামনে মেরাদিয়াগামী একটি রিকশাকে দ্রুতগতিতে এসে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি মোটরসাইকেল। রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন এক নারী যাত্রী।
মোটরসাইকেলে থাকা চালকসহ তিনজনও পাকা সড়কের পিচে পড়ে যান। নারী রিকশাযাত্রী উপুড় হয়ে পড়ায় কপালে, হাতের কনুই ও পায়ে আঘাত পান। মোটরসাইকেলে থাকা চালক ও অন্য এক যাত্রী হাতের তালু ও হাঁটুতে ব্যথা পান।
পথচারী ও স্থানীয় দোকানিরা আহত নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মোটরসাইকেলে থাকা দুজন পাশের একটি ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
বেপরোয়া গতিতে বাইক চালানোর কারণে দুর্ঘটনাটি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া। তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলটা এক-দেড় ঘণ্টা ধরে সাঁই সাঁই গতিতে এদিক-ওদিক ঘুরছিল। সঙ্গে আরও কয়েকটা মোটরসাইকেলও একটি গতিতে চালানো হচ্ছিল।’
বেপরোয়া গতিতে ছুটতে গিয়ে বনানী সেতু ভবনের কাছে সোমবার প্রথম প্রহরে দেড়টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে একটি প্রাইভেট কার।
বনানী থেকে বেরিয়ে আসা একটি গাড়ি হঠাৎ সামনে আসায় বনানী সিগন্যাল থেকে মহাখালীগামী কালো রঙের প্রাইভেট কারটি আইল্যান্ডে উঠিয়ে দেয়।
গাড়ির সামনের ডান পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন চালক। পথচারীরা চালককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠান।
সোমবার দুপুরে মিন্টু রোডে কথা হয় বেইলি রোডের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। ৯ বছর ধরে তিনি নিয়মিত মোটরসাইকেল চালান।
তিনি বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত ছোট-বড় তিনবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। প্রতিবারই হয়েছে অন্যের ভুলে। ঈদের মতো ছুটিতে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেলে বাইক চালাতে ভয় লাগে। ঝড়ের গতিতে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার চলে। কোন দিক থেকে এসে যে ফেলে দেয় এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা ট্রাফিক জোনের সহাকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছুটির সময় ঢাকায় বেশির ভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশও টহলে আছে। তারাও এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দায়িত্বে আছেন। তারা বেপরোয়া গতিতে চলা যানবাহন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।’
ফাঁকা রাস্তা পেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি না চালানোর অনুরোধ করেছেন সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। রাস্তা খালি থাকলেই সর্বোচ্চ গতিতে ছুটতে হবে, এমন কথা নেই। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে আনন্দ করতে গিয়ে যেন ক্ষতির শিকার না হন, সেই বিষয়ে খেয়াল রেখে সীমিত গতিতে গাড়ি চালাতে হবে।’