এই দুর্মূল্যের বাজারে ‘এক টাকা’কে অনেকেই অচল মনে করেন। কিন্তু এই এক টাকা দিয়েই মুরগি, চাল, আলু, সেমাই, চিনিসহ ১৪ পদের পণ্য বিক্রি হলো ব্যতিক্রম এক ঈদবাজারে।
রোববার অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষদের জন্য এই বাজার বসেছিল গাইবান্ধার স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত গাইবান্ধা জেলার শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমাদের গাইবান্ধা’ এই আয়োজন করেছিল। নিজেদের জমানো ও সংগ্রহ করা অনুদানের টাকা দিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে বাজারটি বসানো হয়।
উদ্যোগটি শহরজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দুই শতাধিক অসহায় ও দুস্থ মানুষ ব্যতিক্রম এই বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করেন।
এর আগে বাজারটি উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের প্রশাসক আতাউর রহমান আতা। আয়োজনের প্রসংশা করে তিনি বলেন, ‘ভালো উদ্যোগ এটি। অনেক অসহায় দুস্থ এই বাজারে উপকৃত হবেন। ১ টাকার বিনিময়ে হাজার টাকার বাজার আমিই বিশ্বাস করতে পারিনি।’
১ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার পেয়ে মহাখুশি রুজিনা বেওয়া বলেন, ‘এটা কেমন কথা বাহে। এক ট্যাকাতে এত্তগুলে বাজার পানু। মুই আজ গোশত দিয়ে পেটটা ভরে ভাত খাম।’
শহরের বোর্ডবাজার থেকে পণ্য নিতে আসা রহিমা বেগম বলেন, ‘একজনে সকালে কয়, এক টাকাত বাজার দিবি। শুনি বিশ্বাস করোম নাই। চেংরাগুলো খুব ভালো। আল্লাগ ওমার ভালো করবে।’
সংগঠনটির সভাপতি মো. সায়হাম রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য মানিক আল হাসান, তানজিমুল ইবনে আইয়ুব, রাশেদ রিদেন, আকিব আহসান, ওলি আহমেদ, মুস্তাফিজুরসহ অনেকেই।
বাজারের বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুসাভভির রহমান রিদিম বলেন, ‘গ্লোবাল ভিলেজ থিউরি অনুযায়ী, ছোট্ট একটি গ্রাম পরিণত করার প্রত্যয়ে ২০১৪ সালে আমাদের এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। শুরুতে মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে বর্তমানে আমাদের ৫৪ হাজার সদস্য রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার কার্যক্রম ছাড়াও মানুষের মাঝে সচেতনামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। তা ছাড়া অসহায়দের রক্তদান থেকে শুরু করে ধর্ষণ ও মাদকবিরোধী সামাজিক সচেতনতাসহ তরুণ সমাজের মেধা বিকাশে নানা সহযোগিতা কার্যক্রমও চালাচ্ছি।’
সভাপতি সায়হাম বলেন, ‘আমাদের জমানো টাকায় প্রতি ঈদে আমরা এমন বাজারের আয়োজন করে থাকি। মূলত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ ভাগাভাগি করতেই এমন আয়োজন আমাদের।’