ছিনতাইয়ের জন্য রিকশা যাত্রীদের টার্গেট করে মোটরসাইকেলে অনুসরণ করেন তারা। সুবিধামতো জায়গায় গেলেই আচমকা পেছন থেকে এসে রিকশা যাত্রীর ব্যাগ ছোঁ মেরে নিয়ে পালিয়ে যান।
দামি মোটরসাইকেলে চড়ে দুইজন মিলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই চালান তারা।
একজন মোটরসাইকেল চালান বলে তিনি ‘পাইলট’, যিনি মোটরসাইকেল চালনায় দক্ষ। আর আরোহী হয়ে যিনি ব্যাগ টান দেয়ার কাজটি করে থাকেন তাকে বলা হয় ‘ঈগল’।
রাজধানীর মগবাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রোববার এই ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- লেলিন শেখ, আশরাফুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান খান ও সাইফুল ইসলাম শাওন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি মোটরসাইকেল, ছিনতাই করা ৩৪ লাখ টাকা, ৪ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘গত ১৪ ডিসেম্বর মিরপুর এলাকায় রিকশায় করে ১১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন এক সরকারি কর্মকর্তা। মিরপুর বাংলা স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছালে পেছন থেকে মোটরসাইকেলে করে আসা ছিনতাইকারীরা তার টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার তদন্তে ডিবি জানতে পারে এ ছিনতাইয়ে লেলিন শেখ ও আশরাফুল ইসলাম জড়িত।’
এছাড়া ১৪ মার্চ মিরপুর ১১ নম্বর সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা তুলে রিকশায় করে মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন একজন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে একইভাবে ছিনতাইকারীরা টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই ছিনতাইয়ে জিল্লুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম শাওনকে শনাক্ত করা হয়।
দুটি ঘটনায় পল্লবী থানায় করা মামলায় রোববার পৃথক দুটি অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুটি ছিনতাইয়ে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। তাদের কাছ থেকে দুটি ছিনতাইয়ের ১৫ লাখ টাকাসহ ৩৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ছিনতাই করেছেন বলেও স্বীকার করেছেন।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম ওরফে ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কোম্পানির মিনি ট্রাক চালক লেলিন শেখের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে তিনি ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন।
দুইজন ছিনতাইকারী দামি মোটরসাইকেলে করে টার্গেট নির্ধারণ করে ঢাকায় ঘুরে বেড়ান। এদের মধ্যে যারা মোটরসাইকেল চালান তাদের বলা হয় ‘পাইলট’। আর পেছনে বসে যিনি ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যান তাকে বলা হয় ‘ঈগল’। মূলত দিনের বেলা ব্যাংক কেন্দ্রিক টাকা নিয়ে যারা চলাচল করতেন তাদেরকেই টার্গেট করা হতো।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে আশরাফ ও জিল্লুর পাইলট এবং লেলিন ও শাওন ঈগল উল্লেখ করে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আশরাফ ঈঞ্জিনিয়ার। বাকি তিনজনই বিভিন্ন সময় চালক হিসেবে কাজ করেছেন। মাদক সেবন করতে বেশি টাকার আশায় সুযোগ পেলেই তারা নিয়মিত ছিনতাই করতেন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বাকি ১৯ লাখ টাকার বিষয়ে তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।’
ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আজ থেকে ঢাকায় মানুষ কমে গেছে, প্রায় নীরব হয়ে গেছে ঢাকা শহর। ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগ চেকপোস্ট স্থাপন ও ব্যারিকেড দেয়ার কাজ করছে। যাতে ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত গতিতে বেপরোয়া যানবাহন চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে।
‘মার্কেট ও বাসাগুলোও ফাঁকা হয়ে গেছে। চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে প্রতিটি থানা এলাকায় টহল টিম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আশা করি সামনের দিনগুলোতে তেমন কোনো ঘটনা ঘটবে না ‘
বাসার মালিককেও চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রাখার কথা বলেন তিনি।
ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করছি। এসব চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে প্রাথমিক দায়িত্ব আপনার, পরের কাজটা আমাদের। আমরা ব্যাপক হারে কাজ করছি।’