শেওড়াপাড়া থেকে রামুপরা মেয়ের বাসায় যাবেন সামাদ মোল্লা। আলিফ পরিবহনে উঠে বসেন তিনি। চিরচেনা সেই ঢাকাকে তার অচেনা মনে হচ্ছে।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, অন্যসময় আগারগাঁও পার হতেই আধা ঘণ্টা পার হয়ে যায়। সেখানে মাত্র ২০ মিনিটে বাড্ডা পার হয়েছেন।
এ যেন অন্যরকম ঢাকা। কোনো যানজট নেই, রাস্তঘাট একবারে ফাঁকা। অন্য সময় যখন কোনো গাড়িতে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়, সেখানে এখন যানবাহন আছে কিন্তু যাত্রী নেই।
রাজধানীর সর্বত্রই এখন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
শবে কদর, মে দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে ২৯ এপ্রিল থেকে।
মঙ্গলবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ছুটি পেয়ে রাজধানীর অনেকেই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন।
অনেকেই বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বা দেশের বাইরে ঈদ করতে ঢাকা ছেড়েছেন।
সব মিলিয়ে রাজধানীর পথঘাট এখন প্রায় সুনশান নীরবতা। এমনকি বেশ কিছু সিগনালে কোনো ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নেই। দু-একটি যানবাহন থাকলেও সেগুলো নিজ নিজ দায়িত্বে সিগনালে থামছে, আবার চলে যাচ্ছে।
রাজধানীর অতি ব্যস্ততম সড়ক মহাখালি থেকে গুলশান, বাড্ডা লিংক রোড হয়ে রামপুরা পর্যন্ত ছিল একই চিত্র। যানবাহনের চাপ কম থাকায় অনেক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা।
তবে নগরীতে গাড়ি কম থাকায় যাত্রীদের কিছুটা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। যাত্রী কম বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চিত্রও দেখা গেছে। নির্ধারিত ভাড়ার থেকে ৫ বা ১০ টাকা বেশি দাবি করছেন কন্ট্রাক্টরা।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে তারা ঈদ বকশিশ বলছেন।
শুধু মহাখালী-রামপুরা সড়কই নয়, ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলোর প্রতিটিই সোমবার অনেকটা ফাঁকা দেখা গেছে।
মিরপুর ১০ থেকে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলা মোটর, শাহবাগ হয়ে মতিঝিলের সড়কগুলো ছিল পুরো ফাঁকা। পল্লবী থেকে নীলক্ষেতে যাওয়ার রাস্তাও অনেকটাই নীরব।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে মিরপুর থেকে বিমানবন্দরে গেছেন আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অন্যদিন হলে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগত। আজ মাত্র ২০ মিনিটে চলে আসতে পেরেছি। রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। গাড়ি চালিয়েও আরাম পেয়েছি।’
সোমবার দুপুরে মিরপুর ১০ থেকে বিশ্বরোড গেছেন রফিকুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এমন ঢাকা অনেক দিন পাওয়া যায়নি। রোজার সময় যেদিকেই গিয়েছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হয়েছে। আর আজ মাত্র ২০ মিনিটে চলে এসেছি। অথচ মেট্রো রেলের কাজ চলার কারণে এসব রোডে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়।
‘ঈদে লম্বা ছুটির কারণে রাস্তায় এরকম আরামের চলাফেরা হয়তো আরও কয়েকদিন থাকবে। এরপরই সেই যানজটের বিড়ম্বনা আবার শুরু হবে।’
নগরীর রাস্তাঘাট ফাকা হলেও জমজমাট পিংমলগুলো। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সবাই। শপিংমল বা ফুটপাত পার হলেই সড়কে আবার সেই নির্জনতা।
তবে ফাঁকা রাজধানীতে অনেকে নিরাপত্তা শঙ্কায় আছেন। অনেকেই যাত্রী ছাড়া গণপরিবহনে উঠতে গিয়েও ভয় পাচ্ছেন। ছিনতাই বা ডাকাতির ভয় অনেকের মধ্যে।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলে নেই সেই কোলাহল। ছবি: নিউজবাংলা
ঈদে নিরপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছেন বলে জানান র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে রোববার এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও র্যাব বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে।’
এর আগে রোববার সকালে জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শনে এসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই থানা ও ডিবিতে তালিকা করে কাজ করা হচ্ছে। গত এক মাসে পাঁচ শতাধিক তালিকাভুক্ত চোর ও ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে।’
চুরি-ছিনতাই রোধে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে এই সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০টি থানাতেই আমরা অতিরিক্ত ফোর্স দিয়েছি।’