‘পবিত্র ঈদে সম্মানিত নগরবাসীকে জানাই ঈদের অনাবিল শুভেচ্ছা’- সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকার ফুটওভার ব্রিজের রেলিংয়ে টাঙানো একটি ব্যানারে লেখা রয়েছে এমনটি।
ব্যানারের নিচের নিচে শুভেচ্ছাদাতা হিসেবে লেখা আছে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম। এই ফুটওভার ব্রিজেরই আশপাশ ছেয়ে আছে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে। একটিতে লেখা রয়েছে, ‘আসাদ উদ্দিন ভাইয়ের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা’। এটিএম হাসান জেবুলসহ আরও কয়েকজন একইভাবে জানিয়েছেন ঈদের শুভেচ্ছা।
আসাদ উদ্দিন আহমদ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, আর এটিএম হাসান জেবুল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দুজনেই আগামী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বন্দরবাজারের এই ফুটওভার ব্রিজ শুধু নয়, পুরো সিলেট নগরই ছেয়ে গেছে ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার, পোস্টার আর বিলবোর্ডে। নগরের মোড়ে মোড়ে সাটানো হয়েছে নেতাদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি সম্বলিত শুভেচ্ছাবার্তা। যেসব নেতাদের নামে এসব শুভেচ্ছা বার্তা দেয়া হয়েছে তারা আগামী জাতীয় সংসদ ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।
ফেসবুক মেসেঞ্জার ও মোবাইল ফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমেও ঈদ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে চালিয়েছেন জনসংযোগ। সব মিলিয়ে কোভিড মহামারির সময়ের অচলাবস্থা কাটিয়ে ঈদ উপলক্ষে রাজনৈতিক নেতাদের জমজমাট জনসংযোগ চলছে সিলেটে।
ঈদ উপলক্ষ্যে সিলেটের বাইরে থাকা নেতারাও এবার এলাকায় ফিরেছেন। ফলে এবারের ঈদ অনেকটা নির্বাচনি আবহ তৈরি করেছে। কেউ কেউ অবশ্য প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করছেন না।
সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। আর সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয় একই বছরের জুলাইতে। ফলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগেই আগামী বছরের মাঝামাঝিতে অনুষ্ঠিত হবে সিটি নির্বাচন।
এবারের ঈদে তাই শুভেচ্ছা বিনিময় আর প্রচারণায় এগিয়ে আছেন সিটি নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যেই এই তৎপরতা বেশি। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গত কয়েক দিনে কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
নগরের বিভিন্ন স্থানে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টাঙিয়েছেন সিলেট সিটির সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু। মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তিনি অবশ্য দাবি করছেন ঈদ শুভেচ্ছার পেছনে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই। শিপলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা নগরবাসীর সুখে-দুঃখে, উৎসবে-উপলক্ষে সবসময় পাশে ছিলেন। তার সন্তান হিসেবে আমিও নগরবাসীর পাশে থাকতে চেষ্টা করছি।’
তবে এবারের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে নির্বাচনি আবহ রয়েছে বলে স্বীকার করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক ও মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাশী এটিএম হাসান জেবুল। তিনি বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি সব সময়ই নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। তবে এভাবে পোস্টারিং করি না। এবার যেহেতু আমি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি তাই তৃণমূল পর্যায়ে শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিতে পোস্টারিং করেছি।’
পুরো রমজান মাসজুড়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ইফতার ও খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী আগামী নির্বাচনে আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাশী। সে লক্ষ্যে নগরের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করছি।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের পর উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ পালনের সুযোগ এসেছে। এতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ মিলেছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা সে সুযোগ নেব।’
তবে শুভেচ্ছা জানানোর সঙ্গে আগামী নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নগরবাসীর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আমি সবসময়ই নগরবাসীকে সব উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানাই। এবার ঈদেও জানিয়েছি। দুই বছর পর এবার ঈদের দিন আমি সর্বস্তরের নগরবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব। এর সঙ্গে নির্বাচন বা ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই।’
দুই বছর পর এবার সিলেটে ঈদের সময়ে থাকছেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এটি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি হলেও বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে তিনি শুক্রবারই সিলেট এসেছেন। সিলেটের অন্য পাঁচ আসনের সংসদ সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এবার নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
সিলেট-৩ আসনের সাংসদ হাাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনি এলাকার জনগণের সঙ্গে ঈদ করব। তবে এর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া আমাদের অভিভাবক সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে আমরা সবাই এখন শোকাহত।’
বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না জানিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি। ফলে নির্বাচন নয়, এখন আন্দোলনই আমাদের লক্ষ্য।’
আর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। ফলে তার সব কার্যক্রমই নির্বাচনকে লক্ষ্য এবং জনগণকে কেন্দ্র করে। ঈদ বা এ রকমের উপলক্ষ্যে যেহেতু সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার বড় সুযোগ হয় তাই রাজনৈতিক নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা এ সুযোগ নিতেই পারেন।’