ঈদের আগে ময়মনসিংহ ও বাগেরহাটের বাজারগুলোতে আবারও ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বোতলজাত সয়াবিন উধাও হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
অতিরিক্ত দামে খুচরা তেল কিনতেও ভোক্তাদের দোকানে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিলমালিকরা সরবরাহ বন্ধ করায় বাজারে ভোজ্যতেলের এ সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা তেলের সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। আর ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, অগ্রিম টাকা দিয়েও মিলছে না সয়াবিন তেল।
বোতলজাত সয়াবিন গেল কই
সোমবার সকাল থেকে ময়মনসিংহের নগরীর মেছুয়া বাজার, নতুন বাজার, সানকিপাড়া, চরপাড়া, শম্ভুগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তেলের এক লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ক্রেতারা তেল না পেয়ে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আরফান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। তাই বোতলজাত তেল চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা পাচ্ছেন না। এতে আমাদের কারসাজি নেই।’
খোলা তেল ২০০ টাকা লিটারে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই এই দামে বিক্রি করছে। আমি কয়েক লিটার এ দামে বিক্রি করলেও এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি করছি।’
শম্ভুগঞ্জ বাজারের দোকানদার আহসান উল্লাহ জানান, হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি তেল সরবরাহ করছে। ২০ কার্টন অর্ডার দিলে সরবরাহ করছে ৫ কার্টন। পাঁচ ও দুই লিটারের তেলের বোতল দিচ্ছে না। তারা বলছে, কোম্পানির স্টকে নেই। এতে বাজারে সয়াবিন তেলের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে বিক্রেতাদের এসব যুক্তি মানতে নারাজ ক্রেতারা। ঈদের আগ মুহূর্তে বোতলজাত তেলের সংকট তৈরি করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
মোরশেদ মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘শম্ভুগঞ্জ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঠিকঠাক দরে কিনতে পারলেও তেল কিনতে গিয়ে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এক লিটার খোলা তেলের দাম ২০০ টাকা বলায় দোকানদারের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে ১৯০ টাকায় কিনতে পেরেছি।’
ফজলুল হক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ কারণে আবারও তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অনেকে বোতলজাত না পেয়ে বাড়তি দরে খোলা তেল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারে নিয়মিত নজরদারি করলে বিক্রেতাদের কারসাজি বন্ধ হবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি রাখার কারণে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। বোতলজাত তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে খোলা সয়াবিন তেল বেশি দামে বিক্রি করা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের চরম সংকট
বাগেরহাটের বিভিন্ন খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে এমন সংকটের খবরে দোকানে ভিড় জমাচ্ছে ক্রেতারা।
অন্যদিকে যেসব দোকানে তেল রয়েছে, তারা লিটারপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে তা বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অগ্রিম টাকা নিয়েও কোম্পানি তেল সরবরাহ করছে না।
সোমবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। যেসব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল আছে তারা লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ১৭০ টাকায়। খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
অনেকে আবার বোতলজাত তেল টিনের পাত্র্রে ঢেলে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
বোতলজাত তেল না পেয়ে ২০০ টাকা লিটারে তেল কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতা তানজিম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঈদে বিভিন্ন রান্নার জন্য তেল একটু বেশি লাগে। কয়েক দোকান ঘুরলাম কিন্তু বোতলজাত তেল পেলাম না, তাই বাধ্য হয়ে দুই লিটার খোলা তেল কিনেছি। জীবনে এই প্রথম ২০০ টাকা লিটার সয়াবিন তেল কিনলাম।’
বাগেরহাট ছোট কবরখানার মোড়ে অবস্থিত রিমা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী কিশোর বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে কোম্পানি থেকে কোনো তেল দিচ্ছে না আমাদের। গ্রাহকদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা তেল বিক্রি করতে পারছি না।’
বাগেরহাট বাজারের এসিআই তেলের ডিলার বিশ্বজিত পাল বলেন, ‘দুই মাস আগে তেলের জন্য টিটি করে রেখেছি কিন্তু কোম্পানি এখনও তেল দিচ্ছে না। তাই বিক্রিও বন্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগেরহাট শহরের তেলপট্টি এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতিটি কোম্পানিতেই তেল রয়েছে, কোনো সংকট নেই। আরও এক দফা তেলের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা হিসেবে সংকটের এই নাটক চলছে। তেল চাইলে তারা এর সঙ্গে চাল, ডাল, আটাসহ অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছে।’
বাগেরহাটের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে তাই বলে কেউ ইচ্ছেমতো দাম নিতে পারবে না। দাম বেশি নেয়ার অপরাধে আমরা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করেছি। বর্তমানে কোনো ব্যবসায়ী এ ধরনের কাজ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’