এবার ঈদযাত্রায় মহাসড়ক, ফেরিঘাটে মোটরসাইকেল জটের খবর প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশে হাজারো মোটরসাইকেলের সারির ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় একটি ঘাট কেবল মোটরসাইকেল পার করার জন্য নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
মোটরসাইকেল আরোহীরা বলছেন, বাস, ট্রেন, লঞ্চে টিকিট সংকট, টার্মিনালে ভিড়, সড়কে দুর্ভোগসহ বিভিন্ন কারণে বিকল্প হিসেবে বাইক বেছে নিয়েছেন তারা।
তবে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলের চাপ তৈরি করছে দুর্ঘটনার শঙ্কা। মহাসড়কে চলাচলের সময় ভালো মানের হেলমেটসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন না অনেকে। ব্যস্ত রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোয় অনভ্যস্ততাও রয়েছে অনেকের। এতে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে প্রাণহানির কয়েকটি খবরও পাওয়া গেছে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের হাফিজ আল আসাদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন। ঈদ বা অন্যান্য ছুটিতে বাসে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরিবর্তে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন তিনি।
হাফিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে গোপালপুরের দূরত্ব ১৪২ কিলোমিটার। এই দূরত্বের রাস্তা ঈদের মধ্যে যেতে কখনও কখনও ১৭-১৮ ঘণ্টা লেগে যায়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এই দুর্ভোগ এড়াতেই মোটরসাইকেলে যাতায়াত করি।’
হাফিজ আল আসাদ একজন নিয়মিত বাইকার। তিনি বলেন, ‘আমি এবারও বাড়িতে মোটরসাইকেলে এসেছি। আমার ৩ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লেগেছে। বাস কাউন্টারে টিকিটের লাইন, যানজটে বসে থাকা এসব কিছুই পেতে হয়নি।’
সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাসড়কে যানবাহনের গতি শহরের অভ্যন্তরীণ রাস্তার তুলনায় অনেক বেশি থাকে। সে জন্য সবারই খুব সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
মোটরসাইকেলের মতো ছোট বাহন চালানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহারে কোনো ছাড় না দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহাসড়কে অসংখ্য চালককে সাধারণ মানের হেলমেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ ছাড়া গ্লাভস, নি গার্ড, আর্মস গিয়ারগুলো অনেকে ব্যবহার করেন না। দূরের যাত্রায় অবশ্যই এগুলো ব্যবহার করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘ঈদযাত্রায় নানা ধরনের দুর্ভোগ এড়াতে মানুষ মোটরসাইকেলের দিকে ঝুঁকছেন। ঝুঁকি থাকলেও মোটরসাইকেল নিয়ে অনেকে বাড়ি যাচ্ছেন।’
ছুটিতে মোটরসাইকেলে বাড়ি যাওয়ার সময় অনেকে ভারী ব্যাগ বহন করেন। অনেকে ব্যাগগুলো বাইকের এক পাশে বেঁধে নেন। এতে মোটরসাইকেলে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়।
অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মহাসড়কে দলবদ্ধ হয়ে বা একা মোটরসাইকেল চালালে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। দলবদ্ধ অবস্থায় সামনে থাকা মোটরসাইকেলচালক লিড দেন। হাতের ইশারায় তিনি পেছনের রাইডারদের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সামনে বাঁক, মোড়, বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলো সম্পর্কে পেছনের চালকদের সতর্ক করে থাকেন।
‘একা একা চলার ক্ষেত্রে এসব বিষয় নিজেকেই দেখে চলতে হয়। একটু আনমনা বা অসতর্ক হয়ে গেলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শতভাগ হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। আমাদের অভিযান সব সময় চলমান। তিনজন আরোহী দেখামাত্রই মামলা হবে। আর হেলমেটেও কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না।’
মহাসড়কে মোটরসাইকেল বেড়ে যাওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় টোল প্লাজাগুলোয় কিছুটা ভিড় হচ্ছে। এর বাইরে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে বেপরোয়া চালানোর কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।’
শহরের রাস্তা ও হাইওয়েতে যানবাহন চালানো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধরা যাক মহাসড়কে লিমিট দেয়া আছে ৮০ কিলো, দেখা যায় গাড়ি চলছে ৯০ কিলো প্লাস গতিতে। অনেক মোটরসাইকেলের সেই ক্যাপাসিটি না থাকলেও তা নিয়ে মহাসড়কে অনেকে চলছেন। এগুলো তো বড় গাড়িগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারে না। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’