দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় শনিবার রাত ১২টার পর থেকে মেঘনায় মাছ শিকারে নেমেছেন ভোলার কয়েক হাজার জেলে।
গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদীতে জাল ফেললেও দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশের।
ফলে দুশ্চিন্তা নিয়েই ঘাটে ফিরেছেন জেলেরা। ঈদ সামনে রেখে আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন তারা।
ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে চিন্তা বেড়েছে জেলেদের। এ অবস্থায় কীভাবে স্বজনদের নিয়ে ঈদ করবেন, আর কীভাবেই ঘুরে দাঁড়াবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কপালে।
রোববার সকালে ভোলার ইলিশা, তুলাতুলী, নাছির মাঝি, ভাংতির খাল, জোড়খাল, ভোলার খালসহ বেশ কয়েটি মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে একই রকম চিত্র।
কথা হয় ভোলার ইলিশা মাছঘাটের জেলে রফিজল মাঝির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে আমরা সাতজন জেলে নদীতে ইলিশ শিকারে গিয়েছিলাম। সকাল ৬টা পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরি। তবে বড় সাইজের ইলিশের দেখা না মিলেও ১০-১২টা জাটকা পেয়েছি।
‘ঘাটে বিক্রি করে ১ হাজার ৮০০ টাকা পাই। কিন্তু ট্রলারের তেল ও আমাদের খাবার খরচ বাবদই ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পর আশা করেছিলাম নদীতে অনেক মাছ ধরতে পারব। গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত জাল ফেলে আশানুরূপ ইলিশ পাইনি।’
তুলাতুলী মাছঘাটের রহিম মাঝি বলেন, ‘অভিযানের সময় আমরা নদীতে যাই নাই, মাছও ধরতে পারি নাই। আশায় আছিলাম অভিযান শেষে নদীতে যাইয়া মাছ ধইরা বিক্রি করে আগের দেনা পরিশোধ করতে পারমু। কিন্তু নদীত এখন মাছের যেই অবস্থা তাতে দেনার দায়ে দেশ ছাইড়া পলাইতে হইব।’
আবু মাঝি বলেন, ‘দুই দিন পরে ঈদ। অভিযান শেষে অনেক আশা লইয়া গাঙ্গে গেছিলাম কয়ডা মাছ ধরমু। তা বিক্রি কইরা বাড়িত পোলাইনের লইগা নতুন জামা আর সেমাই কিনমু, কিন্তু নদীতে যাইতে ট্রলারের তেলসহ খরচ হইছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। মাছ বিক্রি করেছি ১ হাজার ১০০ টাকার। এই অবস্থায় কোনো কুলকিনারা পাইতাছি না।’
ধনিয়া তুলাতুলী মাছঘাটের আড়তদার নাছিম বলেন, ‘নদীতে আশানুরূপ ইলিশ না থাকায় আমাদের ব্যস্ততা কম। অভিযান শেষে জেলেরা নদীতে গিয়ে শুধু ইলিশ নয়, অন্য প্রজাতির মাছের দেখাও পাননি। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর তেমন কোনো মাছ ঘাটে আসেনি। এ কারণে ঘাটে বেচাকেনা নাই বললেই চলে।
‘এখন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি মোকামে কী মাছ পাঠাব। ঈদ উপলক্ষে মোকাম থেকে মাছের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে।’
ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি এরশাদ ফরাজি বলেন, ‘এই অভিযানের সময় আমাদের জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল প্রণোদনা হিসেবে দেয়ার কথা থাকলেও দুই মাসের চাউল ৫০ থেকে ৬০ কেজি করে দিছে। অভিযান শেষ হওয়ার পরও বাকি দুই মাসের চাউল জেলেরা এখনও পায়নি।
‘গতকাল রাত থেকে জেলেরা নদীতে নামছে, কিন্তু নদীতে মাছ কম থাকায় জেলেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। জেলেদের এই খারাপ সময়ে তাদের পুনর্বাসন করা না হলে জীবনযাপন খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। জেলেদের বাকি দুই মাসের চাল যাতে অতিদ্রুত দেয়া হয়, এটাই আমাদের দাবি।’
এদিকে জেলা মৎস্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশের অভয়াশ্রমে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এই দুই মাসে ভোলায় ৪০০টি অভিযানে ৮৯৭ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে।
এর মধ্যে ১১২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। বাকিদের ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।