বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্রামীণ ব্যাংকে মুহিতের অবদান স্মরণ ইউনূসের

  •    
  • ১ মে, ২০২২ ১৫:৪৭

ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটির বিষয়ে রাষ্ট্রীয় অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল মুহিতের হাত ধরে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী। সে সময় অনুষ্ঠানটি ঢাকায় করতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। তবে ইউনূস চেয়েছিলেন গ্রামে করবেন। দুই পক্ষের বিরোধের সময়ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন মুহিত।

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভূমিকা স্মরণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ লেখা প্রকাশ করেছেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস।

রোববার প্রয়াত অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে এই স্ট্যাটাস দেন ইউনূস।

শনিবার প্রথম প্রহরে মারা যান মুহিত। এতে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মুহিতের ভূমিকাও স্মরণ করেন।

ড. ইউনূস যখন গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন মুহিত। সে সময় সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল।

ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটির বিষয়ে রাষ্ট্রীয় অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল মুহিতের হাত ধরে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী। সে সময় অনুষ্ঠানটি ঢাকায় করতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। তবে ইউনূস চেয়েছিলেন গ্রামে করবেন। দুই পক্ষের বিরোধের সময়ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন মুহিত।

১৯৮২ সালের ৩১ মার্চ মুহিতের হাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভার দেন এরশাদ। তবে সেই সরকারের সঙ্গে মতভিন্নতার কারণে ১৯৮৪ সালের ৯ জানুয়ারি সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ১৯৭৬ সালে হলেও ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর এটি বৈধ ও স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।

স্বাধীনতার পর দেশে ফেরার স্মৃতি তুলে ধরে ইউনূস লেখেন, ‘দেশে ফিরে আসার পর আবার মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলো তারই উদ্যোগে। তিনি আমার কর্মসূচি সম্বন্ধে জানতে চান। তিনি সরকারি চাকরিতে বিরক্ত হয়ে গেছেন। বললেন, তিনি আমার কর্মকাণ্ড চাক্ষুষ দেখতে চান। আমি সানন্দে ব্যবস্থা করলাম।

‘তাকে নিয়ে পুরো একটা দিন টাঙ্গাইলের হাঁটুভাঙ্গা শাখায় কাটালাম। তার হাজারও প্রশ্নের জবাব দিলাম। ঢাকা ফেরার পথে অনেক কথা বললেন। তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন। আমার সঙ্গে গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করবেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা স্থাপন করবেন সিলেটে।’

ইউনূস লেখেন, চাকরি ছেড়ে মুহিত বিদেশ চলে যান। পরে ১৯৮২ সালের মার্চে কুমিল্লায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার সঙ্গে আবার দেখা হয়। সেই সম্মেলনের বক্তা ছিলেন তারা দুজন।

আগের দিন সন্ধ্যায় অনেক আলাপ হয় দুজনের, কথা হয় গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

ইউনূস লেখেন, ‘এ নিয়ে আমি একটা কনসেপ্ট পেপার লিখেছিলাম। সেটা তাঁকে দিলাম এবং মুখে সবিস্তারে বোঝালাম।’

সম্মেলনের পরের দিন সকালে সবার ঢাকায় ফেরার কথা থাকলেও হঠাৎ সারা দেশে কারফিউ ঘোষণা করা হয়। এরশাদ তখন সামরিক শাসন জারি করেন। তারা কুমিল্লায় আটকে যান।

তখন দুজনের আরও অনেক কথা হয়। কারফিউ প্রত্যাহারের পর সন্ধ্যায় ঢাকা ফেরেন।

ইউনূস লেখেন, পরদিন ঘোষণা শোনেন মুহিত নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি তাকে অভিনন্দন জানান। মুহিত তাকে তখন দেখা করার জন্য খবর পাঠালে ইউনূস খুশি হয়ে ওঠেন। তিনি লেখেন, ‘মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে এবার গ্রামীণ ব্যাংককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার সুযোগ পাব।’

তখন দেখা হয় দুজনের। একপর্যায়ে এসে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ জারি হয়। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কোথায় হবে, এ নিয়ে যখন বিভেদ, তখনও হাত বাড়িয়ে দেন মুহিত।

ইউনূস লেখেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো নতুন ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। আমরা অনুষ্ঠানের জন্য এক পায়ে খাড়া। কিন্তু মন্ত্রণালয় চায় এটা ঢাকায় করতে। আমরা বেঁকে বসলাম। আমরা বললাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গ্রামে হবে।’

মন্ত্রণালয় কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। তখন মুহিতকে আবার ফোন করেন ইউনূস। তিনি সোৎসাহে বললেন, ‘অবশ্যই এটা গ্রামে হবে। এবং আমি সেখানে যাব।’

এরপর ১৯৮৩ সালের ৩ অক্টোবর টাঙ্গাইলের জামুর্কী গ্রামে ভূমিহীন নারীদের সমাবেশের মাধ্যমে মুহিতের উপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়।

ইউনূস লেখেন, ‘তার (মুহিত) সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের বহু আনন্দময়, স্বপ্নময়, গৌরবময় স্মৃতিগুলি স্মরণ করে মুহিত ভাইকে আজ বিদায় জানাচ্ছি।’

একাত্তরের দিনগুলোর স্মরণ

ইউনূসের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মী হিসেবে মুহিতের ভূমিকার কথাও।

ইউনূস লেখেন, ‘মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এটা রেডিওতে শুনে আমরা ন্যাশভিলের ছয়জন বাঙালি তাৎক্ষণিকভাবে একত্র হয়ে বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি গঠন করলাম। প্রত্যেকে এক হাজার ডলার জমা করে একটা তহবিল বানালাম।

‘আমি ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসের দ্বিতীয় উচ্চতম ব্যক্তি এনায়েত করিমকে ফোন করলাম। বললাম আমি ওয়াশিংটন রওনা হচ্ছি। সবার সঙ্গে আলাপ করে কর্মসূচি তৈরি করতে হবে। তিনি আমাকে উৎসাহ দিলেন চলে আসার জন্য। ছয় হাজার ডলারের তহবিল সঙ্গে নিয়ে পরদিন ওয়াশিংটনে গিয়ে সোজা উঠলাম এনায়েত করিমের বাসায়, যার সঙ্গে কোনো দিন আমার পরিচয় ছিল না।’

ইউনূস লেখেন, ‘এরপর ওয়াশিংটনে প্রায় রাতে মুহিত ভাইয়ের বাসায় সবাইকে নিয়ে বসা আমাদের নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়াল। নানা সংবাদ আদানপ্রদান করা, নানা উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্ক, হাতাহাতি। সবকিছুই এই বৈঠকের অংশ হয়ে দাঁড়াল।

‘যারা ওয়াশিংটনের লোক তারা সারা দিন তাদের অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমরা কজন যারা অন্য শহর থেকে এসেছি, তারা সার্বক্ষণিক কর্মী হয়ে কাজ করতে থাকলাম। একদিন মুহিত ভাই বললেন একটা ওয়্যারলেস সেটের জন্য কিছু টাকার দরকার। আমি ন্যাশভিলের ছয় হাজার ডলার তাঁর হাতে দিয়ে দিলাম।’

মুহিতের পরামর্শে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টার বিষয়টিও উঠে আসে ইউনূসের বয়ানে। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা কজন আরেকটা দায়িত্ব নিলাম। এটা হলো বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলিতে গিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানাবার জন্য অনুরোধ জানানো।

‘মুহিত ভাই আমাদের সঙ্গে দূতাবাসগুলির পরিচয় করিয়ে দিতেন এবং আমাদের ব্রিফ দিতেন কার কাছে কীভাবে আমাদের প্রস্তাবটি উত্থাপন করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর