বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাকরি হারানো পাটকল শ্রমিকদের মানবেতর জীবন

  •    
  • ১ মে, ২০২২ ১৪:২৪

নাজমা বলেন,‘গত দুই বছরে বন্ধ মিল চালু ও বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে যে কতবার আন্দোলন করেছি, তার হিসাব নেই। তবে সেই বকেয়া এখনও পাইনি। আমার প্রায় ৪ লাখ টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। আর মিল যে কবে চালু হবে, তা বলতে পারব না। তবে আশাই থাকি আবারও আমরা মিলে কাজ করব।’

‘প্রায় দুই বছর আগে রুটিরুজির একমাত্র অবলম্বন পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি দিন আমার কাছে অন্ধকার মনে হয়। এখন দিনের শুরুতে আমার চিন্তা হয়, আজ দুপুরে কী রান্না করব। খাবার জোগাড় করতে পারব কি না।’

কথাগুলো বলছিলেন বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক নাজমা বেগম ওরফে নাজু।

খুলনার খালিশপুরে ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-খুলনা রেললাইন। ওই রেললাইনের দুই পাশে গড়ে উঠেছে পাটকল শ্রমিকদের বসতি। অস্থায়ী বস্তিতে স্বামী আব্দুর রহিম, দুই মেয়ে পরিমনি ও রহিমা আক্তারকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস নাজমার।

নাজমা বেগম বলেন, ‘মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পরে গর্ভবতী হই। সরকার ঘোষণা দিয়েছিল তিন মাসের মধ্যে আমাদের সব বকেয়া পরিশোধ করে দেবে। একই সঙ্গে দ্রুত মিলগুলো চালু করা হবে। তবে মিল বন্ধের দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও সরকার আমাদের টাকা দেয়নি। তখন শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। তাদের সঙ্গে আমি অংশ নেই।

‘একবার শ্রমিক আন্দোলনের সময়ে পুলিশ আমাকে লাথি মারলে ড্রেনের কাছে গিয়ে ছিটকে পড়ি। তখন আমি তিন মাসের গর্ভবতী ছিলাম। এখন আমার সেই সন্তান জন্ম নিয়েছে। তার বয়স বর্তমানে ৮ মাস। কিছুদিন আগেও একবার শ্রমিকদের আন্দোলনে এই সন্তানকে নিয়ে অংশ নিয়েছি। তখন আবারও পুলিশের মার খেয়েছি।

‘গত দুই বছরে বন্ধ মিল চালু ও বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে যে কতবার আন্দোলন করেছি, তার হিসাব নেই। তবে সেই বকেয়া এখনও পাইনি। আমার প্রায় ৪ লাখ টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। আর মিল যে কবে চালু হবে, তা বলতে পারব না। তবে আশাই থাকি আবারও আমরা মিলে কাজ করব।’

নাজমা বেগম কাজ করতেন খুলনার খালিশপুর জুট মিলে। খুলনা-যশোর অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি পাটকলের মধ্যে ছিল তার মিলের নামও। মিল বন্ধের পর বেকার হন প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক। তাদের দাবি, এখনও বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান পাননি তারা।

রেললাইনের দুই পাশে বস্তিতে পাটকল শ্রমিকদের বসবাস। ছবি: নিউজবাংলা

তবে পাটকল বন্ধ ঘোষণার সময়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছিলেন, ‘আমরা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত বুঝিয়ে দেব। এ ছাড়া মিলগুলো দ্রুত সংস্কার লিজে মালিকানা হস্তান্তর করে এসব শ্রমিকদের আবারও কাজের সুযোগ করে দেব।’

খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম ও খালিশপুর জুট মিলে শনিবার ঘুরেছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। ওই মিলগুলোর আশপাশে অবস্থানরত শ্রমিকরা বলছেন, একসময় ঈদের আগে তাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ থাকত। তবে এখন তাদের উৎসবের রং ছোঁয় না। নতুন করে আবার কবে পাটকল চালু হবে তারা সেই অপেক্ষায় আছেন। আবার অনেক শ্রমিক ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৭টি পাটকল ছাড়াও সারা দেশে আরও ১৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ রয়েছে। ২০২০ সালের ১ জুলাই এসব মিল বন্ধ করার সময় প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়।

সোনালি আঁশে সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বপ্নে স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রতিষ্ঠাকালে বিজেএমসির আওতায় ৭৭টি পাটকল ছিল। বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার পরামর্শে সরকার ধীরে ধীরে পাটকলগুলোকে বেসরকারি মালিকায় হস্তান্তর করে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় মাত্র ২৫টি পাটকল রয়েছে।

তবে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারে পাটকলগুলোকে পুনরায় রাষ্ট্রীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে কয়েকটি মিল চালু করেছিল এই রাজনৈতিক দলটি।

২০২০ সালে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসানে ছিল বিজেএমসি। ওই সময়ে সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সবশেষ বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওপেন বিডিং পদ্ধতির মাধ্যমে বন্ধ মিলগুলোকে পাঁচ থেকে ২০ বছরের জন্য লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের জিএম মো. মুরাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের স্থায়ী শ্রমিকদের প্রায় সব বকেয়া পরিশোধ করেছি। যাদের বকেয়া এখনও পরিশোধ করা হয়নি, তাদের অফিশিয়াল নথিতে নামের বানানে অসংগতি ছিল, যে কারণে মন্ত্রণালয় থেকে একটু দেরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের টাকা বরাদ্দ হয়েছে। হয়তো ঈদের পরে তারা বকেয়া পাবেন।’

তবে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের নেতা রুহুল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা ১৫-২০ বছর ধরে এই মিলগুলোতে কাজ করেছেন, তাদের নামের বানান ভুল দেখিয়ে টাকা আটকে রাখা অন্যায়। নিজেদের দোষে নয়, মিল প্রশাসন ও ইউনিয়ন নেতাদের ভুলের কারণে শ্রমিকরা এই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। আমরা চাই দ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করে, আবারও পাটকলগুলো চালু করা হোক।’

এ বিভাগের আরো খবর