বাদাম বিক্রি করেই প্রায় ৩০ বছর পার করেছেন ৪৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবদুর রউফ৷ এই পেশায় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন ছোট ভাইকে। হাল ধরেছেন সংসারের।
দুই কন্যা ও পুত্রসন্তানের জনক রউফ এ পেশাতেই সক্রিয়। দীর্ঘ সময় বাদাম বিক্রি করলেও নিজের পেশা নিয়ে হীনম্মন্যতা নেই তার। গর্ব করেই বলেন, ‘বাদাম বেচি এইড্যা কইতে শরমের কিছু নাই। বাদাম বেচচাই ছোট ভাইরে আজকে ব্যাংকার বানাইছি। স্বপ্ন দ্যাখিতাছি বড় মাইয়্যাও সরকারি চাকরি করবো। এক জীবনে বাদাম বেইচ্যা আমার কোনো আফসোস নাই। নিজের কষ্টের ট্যাকায় আইজ ভাইবোন, পোলামাইয়্যারে মানুষ করতে পারছি। এডাই আমার কাছে সোনার জীবন।’
মে দিবসের প্রারম্ভে শনিবার রাতে চট্টগ্রামের জিইসিতে স্যানমার ওশান সিটি মার্কেটের সামনে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় মোহাম্মদ রউফের। মার্কেটজুড়ে আলোর রোশনাই তখন। ডালাজুড়ে চেরাগের আলোতেই তখন বাদাম, বুট, শিমের বিচি বিক্রি করছিলেন তিনি।
বাদাম বিক্রিতে দুই যুগেরও বেশি পার করা রউফ জানান, এত বছর আয় রোজগার ভালোই ছিল। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়। তবুও এখনও মাসে ২০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠান তিনি। তাতেও ঘাটতি থেকে যায়।
ভৈরবের কুলিয়ারচর দক্ষিণ নন্দনামপুরে মোহাম্মদ আবদুর রউফের বাড়ি। ১৫ বছর আগে এই বাদাম বিক্রির আয়েই ছোট ভাইকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের পড়ালেখার সব খরচই আমি চালাইছি। আমারে অনেক কইছে বাদাম বেচা ছাড়তে। কিন্তু অন্য কাজ তো পারি না৷ বড় মাইয়্যা এসএসসি দিব এবার৷ সরকারি চাকরি পাইলে একটা ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারমু।’
ঈদে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য কাপড় কিনেছেন কি না এমন প্রশ্নে উচ্ছ্বাস নিয়ে রউফ বলেন, ‘ঈদ তো ওদের জন্য। বাড়ির সবার জন্যই কিছু না কিছু কিনছি। চাঁদরাতে বাড়ি যাব।’
তবে নিজের জন্য ঈদে কিছুই না কেনার কথা জানান তিনি।পরিবারের জন্য কিনেই খুশি এই বাদাম বিক্রেতা।